Daily Frontier News
Daily Frontier News

নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর, সীতাকুণ্ডে অকেজো ১০ হাজার নলকূপ

 

মাসুদ পারভেজ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না। এতে ব্যক্তিগত তিন হাজার নলকূপের পাশাপাশি অকেজো হয়ে পড়েছে সরকারিভাবে স্থাপিত সাত হাজার নলকূপ।

একদিকে নলকূপে পানি না ওঠা, অন্যদিকে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন সীতাকুণ্ডের লোকজন। উপজেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে পান করছেন পুকুর ও খালের পানি।

উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, সৈয়দপুর ও সীতাকুণ্ড পৌরসভা এলাকায় সারাবছরই খাওয়ার পানির তীব্র সংকট থাকে। পানির চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নলকূপ নেই। ২৫টির মতো পাতকুয়া থাকলেও সেখানেও পানি থাকে না। শুকনা মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সংকট তীব্র রূপ ধারণ করে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার ৩২টি জেলেপল্লি, সাতটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এলাকা, বাড়বকুণ্ড ও দারোগারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিবাসীদের সারাবছরই পানির সমস্যায় পড়তে হয়।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ব্যক্তিগত নলকূপের পাশাপাশি সরকারি ১০ হাজার নলকূপ রয়েছে। তবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বেশিরভাগ নলকূপ অকেজো রয়েছে। চোরে নলকূপের ওপরের অংশ খুলে নিয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ নলকূপের কোনো চিহ্ন নেই। মাঝে মধ্যে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নলকূপ সচল করলেও মেরামতের কিছুদিন পর তা পুনরায় অচল হয়ে পড়ে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে খাল ও পুকুরের দূষিত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়বকুণ্ডের ভায়েরখীল আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবদুল কাদের বলেন, প্রকল্পের একমাত্র নলকূপটি অকেজো হয়ে গেছে। এখানকার বাসিন্দারা প্রায় দেড় মাইল দূরে গিয়ে একটি পুকুর থেকে পানি আনতেন। কিন্তু মাছ ধরার নামে বিষ প্রয়োগ করে পুকুরের পানি দূষিত করায় সেই পুকুরের পানিও ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে।

উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুর জেলে পাড়ার মোহনলাল জলদাস বলেন, তীব্র খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জেলেপাড়ার বেশিরভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় গোসলের পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে ময়লা-আবর্জনা ভরা পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে এখানকার লোকজন প্রতিনিয়ত পেটের পীড়াসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আমার এলাকার বেশিরভাগ নলকূপ অকেজো হয়ে রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটে আমার এলাকার জেলেপল্লির বাসিন্দারা পাশের খালের পানি পান করছেন। এ কারণে প্রতিটি ঘরের লোকজন পানিবাহিত রোগে ভুগছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষ পুকুর ও খালের পানি পান করেন। ফলে সারা বছরই তারা পেটের পীড়ায় ভুগতে থাকেন। দেখা যায়, হাসপাতালের আসা বেশিরভাগ রোগী পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ও আমাশয়সহ নানা রোগে আক্রান্ত।

Daily Frontier News