Daily Frontier News
Daily Frontier News

তাহিরপুরে ডাক্তারের দুর্ব্যবহারে রোগীসহ অসহায় গণমাধ্যম কর্মী

এস এ আকঞ্জি

যিশুখ্রিষ্টের জন্মেরও ৪০০বছর পূর্বে গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস চিকিৎসা পেশায় নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের শপথ লিখে গিয়েছিলেন। সেটার আধুনিক সংস্করণ আজও চালু আছে।সেখানে বলা আছে হৃদ্যতা, সহমর্মিতা দিয়ে রোগীদের কথা শুনে তাদের সমস্যা উপলব্ধি করা শল্য চিকিৎসকের ছুরি বা রাসায়নবিদের ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকর।চিকিৎসা শিক্ষায় সেই শপথ পাঠ করানোর রেওয়াজ বাংলাদেশেও রয়েছে। তবে পেশায় ঢুকে তা মনে রাখতে ভুলেই গিয়েছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মিঠুন সরকার। চিকিৎসা সেবা নিতে এসে উনার মমত্ববোধ মুগ্ধ হওয়ার বদলে দুর্ব্যবহারে ভীত হওয়ার অভিজ্ঞতাই এ অঞ্চলের রোগীদের বেশি। এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গেলে, ফার্মাসিস্ট মিঠুন সরকারের দুর্ব্যবহারের কাছে রোগীদের অসহায় হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ।

গতকাল (৩০এপ্রিল)শনিবার উপজেলার শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনার প্রতিষেধক গণটিকা প্রদানের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় লোকজন টিকা গ্রহণে গেলে,টিকাগ্রহণকারিরা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মিঠুন সরকার এর দুর্ব্যবহারের স্বীকার হয়,অনেকের এমন অভিযোগের সত্যতা জানতে শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দায়িত্বে থাকা মিঠুন সরকার এর কাছে জানতে চাইলে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী সাংবাদিক সামছুল আলম আখঞ্জীও মিঠুন সরকার এর দুর্ব্যবহার হতে রেহাই পায়নি।

স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মিঠুন সরকার এর কাছে অফিস চলাকালীন সময়েও টাকা ছাড়া চিকিৎসা সেবা মেলেনি।টাকার জন্য এলাকার দুঃস্থ অসহায় প্রতিবন্ধীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছেন এমন ঘটনা অহরহ।

জানাযায় সম্প্রতি আগাম বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষায় আঘাত পেয়ে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামের কৃষক ডালিম মিয়া জরুরি অবস্থা চিকিৎসার জন্য উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ফার্মাসিস্ট মিঠুন সরকার এর কাছে গেলে উনি থাকে ২ঘন্টা পরে আসতে বলে তাড়িয়ে দিলে,ওই দিন উনাকে চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে ফিরতে হয়।উনার এমন আচরণে এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ অসহায় হয়ে পড়েছে।

উনার এমন আচরণ বিষয়ে বা কোন তথ্য চাওয়া হলে শুধু মিথ্যা মামলার হুমকি নয়, মিথ্যা মামলা হতেও রেহাই পায়নি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা। গেল কয়েকমাস পূর্বে কোন এক বিষয়ে ফার্মাসিস্ট মিঠুন সরকার এর কাছে তথ্য চাইতে গেলে মিথ্যা মামলার স্বীকার হয় স্থানীয় দুইজন সংবাদ কর্মী, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা- সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ার একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে মিমাংসা হয়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শামসুল আলম আখঞ্জী জানান ফার্মাসিস্ট মিঠুন সরকার শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগদান করেই কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থালা ঝুলিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন,তখন চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হয়েছিল এই প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বহুবার সংবাদ প্রকাশ হলে মাস দেড়েক পরে পুনরায় কর্মস্থলে যোগদান করেই,চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে দেখিয়ে যাচ্ছেন অমানবিক আচরণ। উনার এমন ন্যাক্কারজনক আচরণে চিকিৎসা সেবায় সাধারণ জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শামনুর আখঞ্জী জানান এই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে আমিসহ অনেকেই লাঞ্চিত হয়েছে,টাকা ছাড়া উনার কাছে চিকিৎসা পাওয়া যায়না,জরুরি মুহুর্তে সকাল সন্ধ্যায় চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।

উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী তরং গ্রামের জহুর আলম জানান গেল কিছুদিন পূর্বে মন্দিয়াতা গ্রামের আমার এক আত্মীয় হঠাৎ বুকে ব্যথা নিয়ে ছুটে আসেন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য আমিসহ ডাক্তার কে অনেক অনুরোধ করলেও সকাল বলে রোগীকে ফিরিয়ে দিলে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায়, বুকের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রাস্তাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।এ বিষয়টি উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাগনকে অবগত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাহিন মিয়া বলেন, এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক ডাক্তার এসেছে, এছাড়াও অনেক ডাক্তার দেখেছি। ডাক্তারদের আচরণে মুগ্ধ হয়েছি বহুবার, কিন্তু উনি কেমন ডাক্তার উনাকে এই চিকিৎসা পেশায় কি করে আসলেন বিষয়টি জানতে বড্ড ইচ্ছা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মির্জা রিয়াদ হাসান জানান মিঠুন সরকারের বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ পেয়েছি,তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে আগামী ১০তারিখ এর মধ্যে এর সিদ্ধান্ত চলে আসবে। আমি প্রশাসনিক ভাবেও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রায়হান কবির বলেন স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার,আর যাদের দ্বারা মানুষের অধিকার বঞ্চিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Daily Frontier News