Daily Frontier News
Daily Frontier News

তিন পার্বত্য চট্রগ্রামে ম্যালেরিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু

 

মাসুদ পারভেজ ব্যুরোচীফ / রাসেল চৌধুরী

পাহাড়ে ফের ম্যালেরিয়া আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বৃষ্টিতে মশার বংশ বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ায় বান্দরবানের থানচি, রুমা, রোয়াংছড়িসহ সাতটি উপজেলায় মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গতমাসে ম্যালেরিয়া রোগে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ার সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জুন ও চলতি মাসে পাহাড়ি এই জেলায় এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। জেলার দুই উপজেলায় দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বান্দরবান : স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গতবছর ২০২২ সালে ১৩ হাজার ৮১৮ জন ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছিল বান্দরবান জেলায়। তবে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ছিল না। কিন্তু চলতি বছর ২০২৩ সালে এখনো পর্যন্ত দুই হাজার ৯৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছে ম্যালেরিয়ায়। তবে ম্যালেরিয়া রোগে গতমাসে জুনে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে থানচি উপজেলায়। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল গতমাসে জেলায় ১৬৯৩ জন। তারমধ্যে আলীকদম উপজেলায় ছিল ৪৩৫ জন, থানচিতে ৩৬৫, লামায় ২৮৬, রুমায় ২৫৭, নাইক্ষ্যংছড়িতে ১৭৬, রোয়াংছড়িতে ১০৩ এবং সদর উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছিল ৭১ জন। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকও। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে প্রতিবছর কীটনাশকযুক্ত ওষুধ মিশ্রিত মশারি বিতরণ করা হচ্ছে বিনামূল্যে। এবছরও বিনামূল্যে জেলার সাতটি উপজেলায় তিন লাখ ৬২ হাজার ২১৭টি কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, সারাবছরই ম্যালেরিয়া লেগে থাকে বান্দরবান জেলায়। তবে বর্ষা মৌসুমে মে, জুন, জুলাই এ তিনমাস জেলাজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে হঠাৎ করেই ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। জ্বর নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করেই ম্যালেরিয়া রোগে শনাক্ত হচ্ছে মানুষ। বৃষ্টিতে মশার বংশ বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ায় মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে জেলায়। তবে গতবছরের তুলনায় এবছর আক্রান্তের সংখ্যা কম দাবি করেছেন ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কর্মরত স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ডা. তানবির আহমেদ।

স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের অনেকে পরীক্ষায় ম্যালেরিয়া শনাক্ত হচ্ছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এখনো ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা কম। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

থানচি উপজেলার বাসিন্দার মংব্রাচিং মারমা বলেন, হঠাৎ করেই থানচিতে ম্যাালেরিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। থানচি সদর ইউনিয়নের কাইথাং ম্রো পাড়ায় লেংরেইন ম্রো (৯) এবং খ্যাইসাপ্রু পাড়ায় প্রীতি ত্রিপুরা (১৬) নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে গতমাসে। থানচি উপজেলাতে চারটি ইউনিয়নের ৬৬টি পাড়াতে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান অগ্নিশিখা কে বলেন , ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিভাগ নিয়মিত জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে উঠান বৈঠক, বিনামূল্যে কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ কার্যক্রমও চালু রয়েছে। তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্তে পর্যাপ্ত কীট ও চিকিৎসাসেবায় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে মজুদ রয়েছে। হঠাৎ ম্যালেরিয়া রোগী বাড়লেও গতবছরের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা এখনো কম দাবি করেছেন।

এক সময়ের ম্যালেরিয়ার হটস্পট ছিল খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই অবস্থার অনেক উন্নতিও ঘটে। কিন্তু হঠাৎ করেই পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে মশার কামড়ে রোগ বালাই বেড়েছে। বিগত জুন ও চলতি মাসের এই পর্যন্ত প্রাণঘাতি ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব পুরো জেলাজুড়ে থাকলেও ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগই মাটিরাঙা পৌরসভা এবং গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া এলাকায়। তাই মাটিরাঙা পৌরসভা এলাকাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি অনেকে যাচ্ছেন জেলা সদর হাসপাতাল এবং চট্টগ্রামে।

মাটিরাঙার প্রতিনিধি জানান, নাছিমা আক্তার নামে একরোগী তিনি জ্বর নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। রক্তের প্লাটিনাম কমে আসায় খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এখানে ভর্তির তিন দিনের মাথায় তার ৯ মাসের শিশুটির ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। এখন মা–মেয়ে দু’জনই চিকিৎসাধীন।

এদিকে জেলা সদরের ধর্মঘর গ্রামের অংগ্য মারমা (৪৫) ঈদে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি ফিরেন। জ্বর না কমায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। তিনি এখন খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পানছড়ির জয়দ্বীপ দত্তেরও একই অবস্থা। ঢাকা ফেরত এই শিক্ষার্থী বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

জেলা সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯ জন ডেঙ্গু রোগীকে পৃথক কর্নার করে রাখা হয়েছে। তবে সব রোগীর অবস্থাই স্থিতিশীল আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অভাব ও মশক নিধন কার্যক্রম না থাকায় এমন অবস্থা। মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি পৌরসভাসমূহ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের জানান, মশার বিস্তার ঠেকাতে মশক নিধন কার্যক্রম জোরালো করতে হবে।

মাটিরাঙা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক জানিয়েছেন, মশক নিধনের জন্য ওষুধ আনা হয়েছে। দুটি ফকার মেশিন দিয়ে তা ছিটানোর কাজ শুরু করা হবে। মূলত ঈদে ঢাকা ফেরত লোকজনের মাধ্যমেই ডেঙ্গু বেশি ছড়াচ্ছে বলেও দাবি করেন মেয়র।

খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে জুন মাসে ৭৭ জন এবং জুলাইয়ের এই পর্যন্ত ৪১ জন। এছাড়া জুন ও জুলাইয়ে এই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরো বাড়ছে,,।।

Daily Frontier News