Daily Frontier News
Daily Frontier News

বান্দরবান চিম্বুক এলাকায় পানির সমস্যা স্থায়ী সমাধানে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট টিম পরিদর্শন

 

মুহাম্মদ আলী,- বান্দরবান

 

বান্দরবানের চিম্বুক এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের দীর্ঘদিন যাবত দৈনন্দিন ব্যাবহার্য পানি ও সুপেয় বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যার কারনে মানবেতর জীবনযাপন করছে। চিম্বুক রোড়ে গ্যেৎশ মনি পাড়া,বসন্ত পাড়া,নোয়া পাড়া,ম্রো লং,ক্রামাদি পাড়া, দেওয়াই হেডম্যান পাড়া, যামিনী পাড়া সহ বেশ কয়েকটি পাড়ায় ৩৫০ টি পরিবারে বসবাসকারী জনসাধারণের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার বা তারো অধিক।

সাধারণত এই এলাকার বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসাধারণ পাহাড়ের ঝিরি হতে পানি সংগ্রহ করে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পানির ব্যাবস্থা করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।

এবারের শুষ্ক মৌসুমে দুরদুরান্ত পর্যন্ত পাহাড়ের ঝিরি গুলোতে পানির অস্তিত্ব নেই বল্লেই চলে।স্থানীয়রা কয়েক ঘন্টা পায়ে হেটে পাথরের পথ পাড়ি দিয়ে ঝিরি হতে পানি সংগ্রহ করছে তাও নিজের পরিবারের সকলের জন্য পর্যাপ্ত না।

একবার পানি আনলে দ্বিতীয় জন সেই স্থান হতে পানি আনতে অপেক্ষা করা লাগবে ৩-৪ ঘন্টা।
স্থানীয়রা জানালেন এবারে জানুয়ারি হতে মে মাস পর্যন্ত প্রচন্ড গরমের কারনে ঝিরি শুকিয়ে গেছে।তাই দুরদুরান্তে পানির জন্য যেতে হয়।

অনেক সময় পানি না পেয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয়,আর পানি পেলেও সেই পানি ব্যাবহার করা গেলেও খাবার উপযোগী না।

এই এলাকার তীব্র পানি সংকটে এরি মধ্যে বান্দরবান সেনা জোন নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় চিম্বুক এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের মাঝে বিনামূল্যে সুপেয় পানি প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এছাড়াও বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বান্দরবান পৌরসভার মাধ্যমে চিম্বুক এলাকার ম্রো লং পাড়া,বসন্ত পাড়া,নোয়া পাড়া,গেৎশ মনি পাড়া,ক্রামাদি পাড়া, দেওয়াই হেডম্যান পাড়া, যামিনী পাড়া সহ বেশ কয়েকটি পাড়ায় সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যাবস্থা করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ইমে সোমবার বিকেলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী চিম্বুক এলাকার ম্রো লং পাড়া পরিদর্শনে যান।এ সময় তিনি পৌরসভার পানির ভাউচারে করে পাড়ায় বসবাসকারী স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় সুপেয় খাবার পানি সরবরাহের ব্যাবস্থা করেন।

পরে জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজী স্থানীয় বসবাসকারী জনসাধারণ ও পাড়া কারবারির সাথে পানি সংকটের কারন ও এর প্রতিকারের বিষয়ে কথা বলেন।

তারা জানায় অবৈধ পন্থায় গাছ পাথর উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিক ভাবেই পানির উৎস গুলো নস্ট হয়ে গেছে এতে হুমকির মুখে আছে এই এলাকার মানুষ নয়া পাড়া কারবারি রিচং ম্রো তাদের পানির সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন এলাকার মানুষ পার্শ্ববর্তী ঝিরি ঝর্ণা হতে ফোটা ফোটা পানি সংগ্রহ করে তা ব্যাবহার করছে যা খুবই কষ্টসাধ্য।

ম্রো লং পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা পারিং ম্রো জানালেন একই সমস্যার কথা তারা জেলা প্রশাসকের কাছে এই পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ব্যাবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।

এসময় জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী, সহ সংশ্লিষ্ট পরিদর্শন টিমের সদস্য গন চিম্বুক রোড়ের বটতলী ৯ মাইল এলায় পরিদর্শনে যান এবং এই এলাকার ৫-৬ টি পাড়ায় বসবাসকারী জনসাধারণের পানি সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত সম্ভাব্য প্রকল্পের বিষয়টি বিবেচনার জন্য কয়েকটি স্থান নির্ধারণ করেন।

প্রাথমিকভাবে চিম্বুক ৯ মাইল বটতলি এলাকায় প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ঝিরিতে বাধ নির্মাণের মাধ্যমে বছর ব্যাপী পানি সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়।

এসময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান চিম্বুক এলাকায় পানি সমস্যা বেশ কিছুদিন চলমান আছে।উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী,জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ,বান্দরবান পৌরসভা যে যার যার অবস্থান থেকে এই এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য পানির ব্যাবস্থা করছে।

তিনি বলেন এতে জনসাধারণের সাময়িক অসুবিধা লাঘব হলেও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সমাধানে এখানে কার্যকর কোন প্রকল্প গ্রহণ করা যায় কিনা এবং এখানে যে সব এলাকায় ঝিরি গুলোতে পানি জমা আছে এবং বর্ষাকালে পানি গুলো ধরে রাখার ব্যাবস্থা করা যায় কিনা সে বিসয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই ও জায়গা নির্বাচনের বিষয়টি সার্বে করা হচ্ছে।

তিনি জানান ইতি মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বোর্ড সভায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।আমরা চাইছি বাধ নির্মাণ করে বর্ষাকালীন সময়ের পানি গুলো দীর্ঘদিন ধরে রাখার ব্যাবস্থা করা এবং তা দীর্ঘদিন ব্যাবহার উপযোগী রাখা যায় কিনা।

এতে এই এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের পানির সমস্যা সমাধান সহ আশে পাশের এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণ ও এই সুবিধাটা ভোগ করতে পারবে।

তিনি জানান প্রাথমিক ভাবে ঝিরিতে বাঁধ নির্মাণ করে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি কয়েকটি ধাপে সংগ্রহ করে তা ফিল্টারিং করে জিএফএস পাইপ লাইনের মাধ্যমে সব গুলো পাড়াতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সরবরাহের ব্যাবস্থা করা যায় কি সে বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।

তিনি জানান অত্র এলাকার পানি সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ও পরিদর্শন টিম সম্ভাব্য বিষয়টি যাচাই বাছাই করে খুব দ্রুততম সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

এসময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্য্য,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াছির আরাফাত,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী খোরশেদ আলম প্রধান’সহ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।এছাড়াও প্রকল্প পরিদর্শন টিমের সাথে ছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ।

সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে চিম্বুক এলাকার ৫-৬ টি পাড়ার বসবাসকারী ম্রো সম্প্রদায় সহ অন্নান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসাধারণের দীর্ঘদিনের পানির সমস্যার স্থায়ি সমাধানে হবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

Daily Frontier News