আব্দুল জাহির মিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ-
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চন্ডিতে বালুবোঝাই ট্রাক চাপায় সজল মিয়া (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সজল হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কাসেমপুর গ্রামের আব্দুল ছিদ্দিক মিয়ার ছেলে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার সাতছড়ি সড়কের চন্ডি মাজারের অদূরে আঞ্চলিক মহাসড়কে জামটিলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে লাখাই থেকে সজল ও তার ৫ বন্ধু সাতছড়ি ঘুরতে আসেন। সেখানে খাওয়াদাওয়া শেষে দুপুরে তার চাচাতো ভাই রুবেলের মোটরসাইকেল যোগে চুনারুঘাট বাজারের দিকে যাচ্ছিলো। যাত্রা পথে মোটরসাইলেটি ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের চন্ডি মাজারের অদূরে জামটিলা এলাকায় পৌঁছলে একটি বালুবোঝাই ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলকে সামন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সজল মিয়া সড়কে ছিটকে পড়লে ট্রাকটি তাকে চাপা দিলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় দেহ। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল ৩টায় মৃত ঘোষণা দেন। এদিকে ঘটনার পরপরই ঘাতক ট্রাক চালক পালিয়ে যায়। চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম বলেন, ঘাতক ট্রাকটি থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে চালক পলাতক রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচেতন উপজেলাবাসীর অভিযোগ, দিনরাত সাতছড়ি সড়কে দশ চাকার ভারী ট্রাক দাপিয়ে চললেও বেপরোয়া এসব বালুর ট্রাক নিয়ন্ত্রণে কারও ভূমিকা দেখা যায় না। পৌরবাসি বেপরোয়া বালু ট্রাক বন্ধের দাবিতে ইতিপূর্বে আন্দোলন করলেও ফল আসেনি। জানা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলা খোয়াই নদীর বিভিন্ন বালুমহাল থেকে প্রতিনিয়ত উত্তোলন করা হচ্ছে লাখ লাখ টন বালু। উপজেলার বিভিন্ন ডিপো থেকে প্রতিদিন অন্তত শতাধিক ট্রাক করে বালু যাচ্ছে ওই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে। নিহত সজলের চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া বলেন, আমরা ৫ জন আজকে সাতছড়ি আনন্দ ভ্রমণে ছিলাম। ভ্রমণ শেষে আমরা বাড়ি ফেরার পথে বালুবাহী ট্রাক বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দিলে আমার ভাই গুরুতর আহত হয়। আমরা ওই চালকের বিচার চাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্থানীয় পথচারী কাওছার মিয়া জানান, চুনারুঘাট বাসীর আতঙ্কের নাম ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাক। সাতছড়ি সড়কে প্রতিদিন আইন অমান্য করে ওভার লোড নিয়ে শহরে বা গ্রামে বেপরোয়া গতিতে দিনরাত প্রায় শতাধিক বালুবাহী ট্রাক দাঁপিয়ে বেরাচ্ছে। ফলে এলাকাবাসীসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পরিবহন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। প্রাণ হারাচ্ছে শিশু থেকে বয়স্করা। তবুও প্রশাসন নিরব।
. এসব যানের চাকার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে এজেলা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক এখন ভেঙেচুরে একাকার। দণ্ডবিধিতে কোনো সরকারি সম্পদের ক্ষতি করলে এর শাস্তি বিধান রয়েছে কিন্তু বাস্তবে এর এর কিছুই হচ্ছেনা । সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসন-পুলিশ সদস্যদের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে বালুবাহী ডাম্পার ট্রাক। কিন্তু এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোন আইন প্রয়োগ না করে শুধু মোটরসাইকেল ধরপাকড় করছে সংশ্লিষ্টরা। এলাকাবাসী জানায়, বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দু’পাশের ঘর-বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। ওভার লোড বহন ও অবৈধ যানবাহন পরিচালনার বিষয়ে বক্তব্য গ্রহণের জন্য ট্রাক চালক লতিফ মিয়া জানান, আমরা দুর থেকে আসি এবং সিরিয়াল মেনটেন করার জন্য একটু স্পিডে চালাই। তবে আমরা খুবই সতক এবং কাউকে মারতে চাইনা। ফয়জুল মিয়া নামে এক পর্যটক বলেন, সাতছড়ি সড়ক বেপরোয়া বালুট্রাকের জন্য এখন অতঙ্ক, কেউ ভয়ে ওই সড়কে যেতে চায়না, তিনি ট্রাকের বেপরোয়া গতি বন্দে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছেন।
Copyright © 2024 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics