Daily Frontier News
Daily Frontier News

সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি হলেন সাংবাদিক মামুন

 

রিমন খান স্টাফ রিপোর্টার।

.     সংবাদটি অবিশ্বাস্য, হাস্যকর আর উদ্বেগজনক যাই বলা হোক না কেন বাস্তবে ঘটছে এমনটাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রামের সরকারী খাস জায়গার ধানের মালিকানা নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষে এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাটি জন্ম দিয়েছে বিরাট ধূম্রজালের। সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে ভিডিও ফুটেজ নিতে গিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি হয়েছেন এশিয়ান টেলিভিশন ও দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার সরাইল প্রতিনিধি মোঃ আল মামুন খান।

.     ঘটনার সময়ে এলাকায় না থেকে অর্থাৎ ঢাকায় সরকারী চাকরির কর্মস্থলে থেকেও আসামি হয়েছে সিআইডিতে কর্মরত শিব্বির আহমেদ। হতভাগা এ সিআইডি পুলিশের মতই ভাগ্য বরণ করেছেন ঢাকায় কর্মস্থলে থাকা আরেক ইন্জিনিয়ার বায়েজিদ সরকার, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম আনোয়ার হোসেন। শুধু তাই নয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মহিলা চেয়ারম্যান আছমা বেগমকে ২ নং আসামি করে মামলাটিকে বিরাট হাস্যরহস্যের উপদানে পরিণত করা হয়েছে।

.       জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল সরকারী খাস জায়গার ধানের মালিকানা নিয়ে বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘটিত দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। তিন শতাধিক আসামি করে পুলিশ অ্যসল্ট মামলা হয়েছে। রুজু হয়েছে একটি হত্যা মামলাও। দুটি মামলার গ্যাড়াকলে শাহজাদাপুর গ্রামটি এখন বিরাণভূমি।

.     অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহজাদাপুর তিতাস নদীর পাড় সংলগ্ন রিপনদের একটি জমি আছে। আর এ জমির নিচে বা ভাটিতে রয়েছে সরকারি খাস জমি। সাধারণত ওই খাস জমিটি অস্থায়ী ভাবে ব্যবহার করা কথা রিপনদেরও। কারণ উজানের জমি যার ভাটির জমি তার। কিন্তু দূর থেকে এলাকার নব্য যুবলীগ নেতা শেখ মুন্নার গোষ্ঠী ও সর্মথিত কাউছার, মাসুক, জুয়েল, আবজালরা অন্যয়ভাবে জোরপূর্ব জমিটি দখল করে চাষাবাদ করে আসছে।

.     শুধু তাই নয় দখলকৃত ওই জমি থেকে প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকার মাটি কেটে বিক্রিও করছে তারা। বিবদমান ওই জমিতে ধান রুপন করে ছিল মাসুক ও কাউছার। ধানকাটার সময় হলে কে নিবে ধান, এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলে রিপন মিয়া উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করে। সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা প্রশাসন উভয় পক্ষকে জমিতে যেতে বারণ করে। কিন্তু প্রশাসনের বাধাকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে যুবলীগ নেতা শেখ মুন্না ও ইউপি সদস্য জুয়েলের নির্দেশে মাসুক ও কাউছার গংরা শতাধিক লোকজড়ো করে ধান কেটে নিয়ে যায়।

.     এ দৃশ্যটি স্থানীয় সংবাদকর্মী আল মামুন খান ভিডিও ধারণ করে উপজেলা ও থানা প্রশাসনকে অবহিত করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে কাটা ধান উদ্ধার পূর্বক জব্দ করে। এতে স্বস্তির শ্বাস ফেলে ছিল এলাকাবাসী।ভেবেছিল, পুলিশ বা প্রশাসনের হেফাজতে জব্দ করা ধান নিয়ে যাবে এবং বিদ্যমান সংকটের সুন্দর সমাধান হবে কিন্তু বিধি বাম, বেড়াক্ষেত খাওয়ার মত কান্ড জন্ম দিল পুলিশ। জনমনে প্রশ্ন, পুলিশ স্বপ্রনোদিত হয়ে ধান কেটে নেয়া মাসুক মিয়ার ভাই কাউছারের কাছে জমা দিয়েছে নাকি যুবলীগ নেতা শেখ মুন্না ও জুয়েল মেম্বারের ইন্ধনের এটি হয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তর যাই হোক না কেন আসল ঘটনার সূত্রপাত্র এখানেই। পুলিশ একটি পক্ষকে জব্দকৃত ধান দিয়ে দেওয়ায় অথবা তারা ধান নিয়ে নেওয়ায় এবং আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে প্রতিপক্ষকে উস্কে দেয়ায় তাদের ধৈর্যের বাদ ভেঙে যাওয়ায় পরেদিন উভয় পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে যায়। এ সংঘর্ষে দুটি গ্রুপ দেশীঅস্ত্র নিয়ে মারামারি করে ও এতে অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ আহত হয়। তাদের হামলা থামাতে গিয়ে পুলিশও আহত হয়েছে। এদিকে আশ্চর্যের বিষয় হল যে স্থানে সংঘর্ষে হয়েছে সে স্থান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে কামাল উদ্দিন নামের ষাটোর্ধ এক ব্যক্তি মারা যায়।

.      অনুসন্ধানে জানা গেছে, কামাল উদ্দিন ছিল হার্টের রোগী। ইতি পূর্বে সে আরো দুবার হার্ট এট্যাকের শিকার হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ জানিয়েছেন কামাল উদ্দিন হার্ট এট্যাকের মারা যাওয়ার পর তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। আশ্চর্য আর প্রশ্নবোধক চিহ্নে ভরা শাহজাদাপুরের এ ঘটনায় নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এশিয়ান টিভির সাংবাদিক মামুন পুলিশের সাইড লাইনে থেকে ভিডিও ফুটেজ ধারণ করতে গিয়ে যুবলীগ নেতা মুন্নার পূর্ব আক্রোশ মেটাতে তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত পুলিশের মামলাও পুলিশবান্ধব সাংবাদিক মামুন খানকে আসামি করা হয়েছে যা রীতিমত উদ্বেগজনক ও পেশাগত হুমকির কারণ। তৃতীয়ত ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মরত শিব্বির আহমেদকে আসামি করা হয়েছে। চতুর্থত ঢাকা অফিসে কর্মরত ইন্জিনিয়ার বায়েজিদ সরকার আসামি হয়েছে। পঞ্চমত স্থানীয় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আছমা বেগমসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা এসএম আনোয়ার হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে।

.     এ রকম ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করে মুন্না ও জুয়েল গংরা তাদের আক্রোশ মিটিয়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছে। এদিকে কামাল উদ্দিনের খুনের কথা প্রচারের পর মানুষ এলাকা ছাড়া হয়ে পরলে আবারও মুন্না ও জুয়েলের নেতৃত্বে শুরু হয় ব্যাপক লুটতরাজ। বাড়ি ঘর থেকে ধান, চাল, টিভি, ফ্রিজ, গবাদিপশু ও মাঠে চড়ানো শতাধিক গরু বাছুর নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি ও পাচার করে দেয়। এ বিষয়ে মুন্না ও জুয়েলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

.     মামলার বিষয়ে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ এমরানুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত হত্যা মামলায় ৪ জন আসামি আটক হয়েছে এবং বাকীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত আছে।

.    এদিকে সংবাদ সংগ্রহে করতে গিয়ে এশিয়ান টিভির সাংবাদিক আল মামুন খানকে আক্রোশমূলক প্রধান আসামি করায় জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে আসামির তালিকা থেকে অব্যহিত দিয়ে
পুলিশের সাথে গণমাধ্যমকর্মীদের ফারাক ঘুচানোর জোর-দাবি জানিয়েছেন।

 

Daily Frontier News