মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার অবদান অপরিসীম। একটি দেশ ও জাতির অগ্রগতির মূলে রয়েছে শিক্ষা। ব্যক্তি জীবন তথা সামাজিক জীবনের পাশাপাশি আমাদের জীবনের দৈনন্দিন কাজে কর্মে নৈতিক, মানবিক, ধর্মীয় বোধ,সাংস্কৃতিক চিন্তাধারা ও সামাজিক মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করার মূল হাতিয়ার শিক্ষা। এই বোধ থেকেই ইংরেজ কবি জন মিল্টন বলেছেন, “Education is the harmonious development of mind, body and soul”. মানুষ শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত নতুন জ্ঞান, দক্ষতা ও নবুর দৃষ্টিভন্দিকে কাজে লাগিয়ে নিজের ও পরিবারিক জীবনকে আরো সুন্দর,অর্থবহ করার পাশাপাশি সমাজ ও দেশের জন্য অবদান রাখতে সক্ষম। আর এই শিক্ষাদানের বিষয়টি শুরু হয় পরিবার থেকেই। শিশুর শিক্ষার মূল বুনিয়াদ গড়ে ওঠে অপ্রাতিষ্ঠানিক কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গমন করে।
শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনের মধ্য দিয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় শৈশবে এবং শেষ হয় মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শুরু হওয়ার আগে। প্রাথমিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সকল শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান,গঠন ও লিখন দক্ষতা এবং গাণিতিক সংখ্যার বাংলা তৈরি হয়। এছাড়া প্রাথমিক শিকার মাধ্যমেই শিশুদের মাঝে বিজ্ঞান, মানসিক দক্ষতা, ভূগোল এবংঅন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করে দেয়া হয় যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে শিক্ষাকে সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেহেতু বাবা- মা সহ পরিবারের অন্য সদস্য অপেক্ষা শিশুরা বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে অধিকতর গুণগত সময় অতিবাহিত করে সেহেতু বিদ্যালয়েই হবে একজন শিক্ষার্থীর নিজেকে ভবিষ্যত জীবনের জন্য প্রস্তুত করার উপযুক্ত স্থান। শিশুর শিখন দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের যথার্থ কৌশল সৃষ্টি করে শিশুকে আজীবন শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করার প্রধান দায়িত্ব একজন শিক্ষকের। প্রাথমিক অবস্থায় শিশু মনের বিকাশ ঘটাতে শিক্ষকের অবদান অপরিসীম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের ভর্তি শতভাগ নিশ্চিত ও উপস্থিতি নিয়মিত করণের পাশাপাশি বিদ্যালয়কে শিশুদের নিকট আগ্রহী করে তুলতে শিক্ষকগন যে সকল ভূমিকা রাখতে পারেন –
**বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও শ্রেণিকক্ষে শিশু বান্ধব করে গড়ে তোলা।
**শিশুদের সুযোগ সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা। **বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্ধারণ করে পর্যাপ্ত খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা।
**বিদ্যালয়ের পক্ষাঘাত গ্রস্থ বা প্রতিবন্ধী শিশু থাকলে তাদের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা।
**শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে আন্তরিক হওয়া।
**পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করা।
**প্রাপ্ত প্রশিক্ষনের সফল ব্যবতায়ন করা।
** শ্রেণিকক্ষে আকর্ষণীয় রং, ছবি, ফুল, দ্বারা সজ্জিত করা।
** শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
** লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের মানসিক বিকাশেরও পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদানের খেয়াল রাখা।
**নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কর্তৃক গল্প, আবৃতি ছবি আঁকা, গান, নাচ,অভিনয় সহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চর্চার সুযোগ প্রদান করে দেয়া।
** সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চর্চার মাধ্যমে শিশুদের সুকুমার বৃত্তি উন্মেষ ঘটানো।
**শিক্ষার্থীদের নিকট নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা।
**শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করা ।
** শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক সকল প্রকার শাস্তিদান থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
**ম্যানেজিং কমিটিকে কার্যকরী করা।
**অভিভাবক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত অভিভাব সমাবেশের আয়োজন করা।প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে আসার ব্যাপারে আগ্রহী করা।
উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে একটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পাবে।তাছাড়া বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আন্দোলনকে সরকারের একক দায়িত্ব না ভেবে প্রত্যেক নাগরিককেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের প্রচেষ্টার সম্মিলিত রূপরেখাকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে অশিক্ষা ও নিরসারতার কালো ছায়া থেকে মুক্ত করা সম্ভব। আশা করা যায় একদিন প্রকৃত শিক্ষায় সুশিক্ষিত এক জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নাম লেখা হবে স্বর্ণাক্ষরে।
কলমে
মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম
প্রধান শিক্ষক
শ্রীঘর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাসিরনগর ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
Copyright © 2024 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics