দলিল উদ্দিন গাজীপুর
গত বছর একটি জিরাফের মৃত্যুর কারণ হিসেবে পুরুষ ‘সঙ্গীর অভাবের’ কথা বলা হয়; এরপর বেঁচে থাকা বাকি দুটি জিরাফের জন্য এখনো পুরুষ সঙ্গী আনা হয়নি।
গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সবশেষ পুরুষ জিরাফটি মারা গেছে বছর পাঁচেক আগে; এরপর থেকে পার্কে জিরাফ ছিল তিনটি, সবগুলোই মাদি।
এর মধ্যে গত বছরের ২০ অক্টোবর মারা যায় একটি। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তখন ‘পুরুষ সঙ্গীর অভাব এবং জরায়ুতে ক্যান্সারের’ কথা বলা হয়।
‘সঙ্গীর অভাবে’ জিরাফের মৃত্যুর কথা বলা হলেও পার্কে এখন যে দুটি বেঁচে আছে, সেগুলোর জন্য নতুন করে কোনো পুরুষ জিরাফ আনা হয়নি। ফলে মাদি জিরাফ দুটির ভাগ্যেও একই ঘটনা ঘটতে পারে কিনা, সেই প্রশ্ন থাকছে।
সাফারি পার্কে পুরুষ জিরাফ আনার প্রশ্নে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, “বাজেট পেলে পুরুষ জিরাফ আমদানি করা হবে। আমাদের প্রজেক্টটা পাইপলাইনে আছে। যদি আসে তাহলে আনতে পারব।”
২০১৩ সালে ৩ হাজার ৮১০ একর জায়গাজুড়ে পার্ক গড়ে তোলার শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুই দফায় মোট ১০টি জিরাফ আনা হয়। আন্তর্জাতিক প্রাণী বিপণন প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে এগুলো আমদানি করে কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চারটি বাচ্চার জন্ম হয়।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের জলহস্তী।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের জলহস্তী। ফাইল ছবি
সেই হিসাবে ১৪টি জিরাফের মধ্যে পার্কে এখন আছে দুটি। বাকিগুলো মারা গেছে কিনা- জানতে চাইলে শারমিন আক্তার বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়েছি ২০২৩ সালে। সেই সময় জিরাফ ছিল তিনটি। এর আগে কিছু জিরাফ চট্টগ্রাম দেওয়া হয়েছিল। আর বাকিগুলো মারা গেছে।”
সঙ্গীর অভাবে জরায়ুতে ক্যান্সার হয়ে জিরাফ মারা যায়?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে সবশেষ মারা যাওয়া মাদি জিরাফটি ২০২১ সাল থেকেই অসুস্থ ছিল বলে গত বছর জানিয়েছিলেন বন কর্মকর্তা শারমিন।
সেসময় তিনি বলেন, জিরাফের ময়নাতদন্ত করে ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ওই বোর্ডের অধীনেই জিরাফটির চিকিৎসা চলছিল।
মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনের বরাতে তিনি বলেছিলেন, কোনো পুরুষ জিরাফ না থাকায় জিরাফের মেটিং (প্রজনন) হচ্ছিল না। পরিণত এবং মেটিংয়ে ব্যর্থ একটি জিরাফের জরায়ুতে পচন ধরে, যা পরে ক্যানসারের রূপ নেয়।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গত বছরের জুলাইয়ে মারা যায় একটি ওয়াইল্ড বিস্ট শাবক ও বিদেশি পাখি ব্লু ম্যাকাও।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গত বছরের জুলাইয়ে মারা যায় একটি ওয়াইল্ড বিস্ট শাবক ও বিদেশি পাখি ব্লু ম্যাকাও।
তবে এমন তথ্যের ‘বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই’ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামানের ভাষ্য।
তিনি বলেন, “এটা তো অদ্ভুত কথা। মেইল না থাকলে যে ফিমেইলদের জরায়ুতে পচন ধরে ক্যান্সার হয়ে মারা যাবে, এটার সায়েন্টিফিক ভিত্তি নাই। এসব তথ্য তারা কোথায় পায়? কোনো গরুর যদি প্রজনন না হয়, তাহলে কি তার জরায়ুতে পচন ধরবে?
“মেডিকেল বোর্ডে থাকে কারা? এখানে ওয়াইল্ডলিফ বায়োলজিস্ট থাকা উচিত, ভেটেরিনারি সার্জন থাকা উচিত, পশু লালন-পালন করে যারা, তারা থাকা উচিত। অনেক ধরনের লোক থাকা উচিত। সেগুলো কি ছিল? নিশ্চয় ছিল না।”
ফিরোজ জামান বলেন, “এসব কথা বলার ক্ষেত্রে কোনো এক্সপেরিমেন্ট করেছে, নাকি কোনো রিসার্চ করেছে? তারা দেখাতে পারবে যে মেইল না থাকলে পচন ধরে মারা যায়?”
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রাণী কমন ইল্যান্ড।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রাণী কমন ইল্যান্ড। ফাইল ছবি
সাফারি পার্কে পুরুষ জিরাফের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সাফারি পার্ক হল ব্রিডিংয়ের জন্য, সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। এমন জায়গায় পুরুষ জিরাফ নেই, তাহলে তো হবে না। তাদের উচিত ছিল পুরুষ জিরাফ সংগ্রহ করা। সংগ্রহ না করলে সমস্যা।
“মানুষের যেমন জরায়ু থাকে, পশুদেরও তো তেমন জরায়ু থাকে। দীর্ঘদিন যদি প্রজনন ব্যবস্থাপনা না থাকে, তারও তো ইমোশন আছে। সেই ইমোশন যদি খারাপ হয়, সেখান থেকে মেন্টালি একটা প্রভাব পড়ে। সেটা গিয়ে হেলথের উপর প্রভাব পড়ে।”
তার ভাষ্য, “সাফারি পার্কে প্রশিক্ষিত ওয়াইল্ডলাইফ বায়োলজিস্ট নেই বলে এ প্রশ্নগুলো তারা জন্ম দিচ্ছে।”
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, “এগুলো হচ্ছে সাপোর্র্টিভ কথা। পুরুষ জিরাফ না থাকার কারণে, মেটিং না হওয়ার কারণে জরায়ুতে এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। তার পরবর্তীতে জরায়ুতে ক্যান্সার হয়ে মারা যায়।”
গত বছর মারা যাওয়া জিরাফটির মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদন দেখতে চাইলে তিনি বলেন, “রিপোর্ট দেওয়া যাবে না। রিপোর্ট আমাদের প্রোপার চ্যানেলে পাঠিয়ে দিয়েছি মন্ত্রণালয়ে।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘কথা বলা নিষেধ আছে’ মন্তব্য করে শারমিন আক্তার ,।
Copyright © 2025 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics