Daily Frontier News
Daily Frontier News

প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুরুত্ব

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির ।।

আলোকিত জীবন, সুন্দর জীবন। আর সুন্দর জীবন গঠনে সমাজ বা সামাজিক দায়- দায়িত্ব এবং করণীয় সম্পর্কে ইসলামে সু- স্পষ্ট দইক- নির্দেশনা রয়েছে। সমাজজীবনে অনেক মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম বিষয়ে ওয়াদা করা হয়। সৃষ্টির সূচনাকালে আমরা প্রত্যেকেই আল্লাহর হুকুম পালনের ওয়াদা দিয়ে এসেছিলাম রুহের জগতে। সেখানে অগণিত সৃষ্টিকুল সাক্ষী রেখে ওয়াদা করেছিলাম (খোদায়ি বিধি- বিধানের) ইসলামী জীবনযাপনের। আমাদের দেওয়া ওয়াদা সম্পর্কে আমরা জিজ্ঞাসিত হব আপন রবের দরবারে। সেদিন ধরা পড়ে গেলে আর রক্ষা নেই। তখন ভুল শুধরানোর কোনো সুযোগ নেই। জ্বলতে হবে জাহান্নামের আগুনে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালন কর। নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে (তোমাদের) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৩৪)। সঠিক জবাব না দিয়ে পরপারে কেউ মুক্তি পাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা কেন এমন কথা বল! যা কাজে পরিণত কর না, এটা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ যে তোমরা বলবে এমন কথা যা করবে না।’ (সুরা সাফ : ২-৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের সন্ধিচুক্তি পালন কর।’ (সুরা : সফ, আয়াত : ১)

প্রতিশ্রুতি রক্ষায় রয়েছে সফলতা ও পুরস্কার। প্রতিশ্রুতি পালনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। প্রতিশ্রুতি পালন করা ঈমানদারের নিদর্শন। যে প্রতিশ্রুতি পালন করে না সে মুনাফিক।
হাদিসে শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি ১. যখন কথা বলবে মিথ্যা বলবে। ২. যখন ওয়াদা করে, তা ভঙ্গ করে। ৩. তার কাছে যখন আমানত রাখা হয় সে তার খেয়ানত করে।’ (বুখারি : ৩৩)। মানুষ তার প্রতিশ্রুতি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য মহান রবের নাম নিয়ে কসম করে। আর আল্লাহর নাম নিলে মানুষ বিশ্বাস করে যে এই ওয়াদা অবশ্যই পালনীয়। কেননা এই ওয়াদায় রয়েছে প্রতিপালকের নাম। সুতরাং ওয়াদা পালনে আমাদের হতে হবে আপসহীন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যখন আল্লাহর নামে ওয়াদা কর, তা পূর্ণ কর।’ (সুরা নাহল : ৯১)

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ওয়াদার ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। কারও সঙ্গে কোনো বিষয়ে ওয়াদা করলে তা পালনের জন্য অধীর থাকতেন। তেমনি ছিল তার হাতে গড়া সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। তাঁরা প্রতিশ্রুতি পালনে ছিলেন আপসহীন। হযরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে ডেকে বলেন, বাহরাইন থেকে সম্পদ এসে গেলে তোমাকে এ পরিমাণ দেবে। বলাবাহুল্য, বাহরাইন থেকে সম্পদ আসার আগেই নবী (সা.)-এর ইহজগত থেকে পর্দা করেন এবং আবু বকর খলিফা নিযুক্ত হন । এরই মধ্যে বাহরাইন থেকে সম্পদ এসে গেল। আবু বকর আহ্বানকারীকে নির্দেশ দিলেন। আহ্বানকারীকে ডেকে বলেন, যার সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর কোনো ওয়াদা রয়েছে সে যেন আমাদের কাছে এসে যায়। এ কথা শুনে আমি এলাম এবং আবু বকরের কাছে বললাম। নবী করিম (সা.) আমাকে এরূপ এরূপ বলেছিলেন। আবু বকর আমাকে ভয়ে ভয়ে মেপে দিলেন (যেন প্রতিশ্রুতি পরিমাণের চেয়ে কম হয়ে না যায়)। আমি গুনে দেখলাম ৫০০ দিরহাম। আবু বকর (রা.) বলেন, ‘এর দ্বিগুণ নিয়ে যাও।’ (বুখারি ও মুসলিম) । ইসলাম প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা রক্ষা করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। সুতরাং ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন সুন্দর করতে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন কে আলোকিত করতে আসুন, আমরা সবাই প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা রক্ষায় মনোযোগী হই । আমিন।।

Daily Frontier News