Daily Frontier News
Daily Frontier News

নরসিংদীতে সাত বছর ধরে বদলি ছাড়াই এক পদে কর্মরত ইকরামুল হাসান, দুর্নীতির পাহাড় গড়ে হয়েছেন কোটিপতি

নরসিংদী থেকে মাসুদ রানা বাবুল:-

 

নরসিংদী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. ইকরামুল হাসান চৌধুরী দিনের বেলা অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় তার ‘ঘুষের হাট’। অফিস কক্ষটি যেন হয়ে উঠেছে দুর্নীতির অভয়ারণ্য। সাত বছর ধরে একই পদে দায়িত্বে থাকা ইকরামুল, সরকারি সীমিত বেতনে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিনব কায়দায় ঘুষ

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিল পাস করানোর নামে অভিনব পদ্ধতিতে ঘুষ আদায় করেন তিনি। নগদ ছাড়াও চেকের মাধ্যমে চলে লেনদেন। এমনকি গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর নাম ভাঙিয়েও আদায় করেন অর্থ।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তাকে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে বদলি হওয়ার কথা থাকলেও ইকরামুল গত সাত বছর ধরে বহাল তবিয়তে নরসিংদীতেই রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তিনি পেয়েছেন ‘অদৃশ্য সুরক্ষা’।

‘ঘুষের আদান-প্রদান’ আশরাফের মাধ্যমে

ইকরামুল সরাসরি টাকা গ্রহণ করেন না। তার হয়ে অর্থ লেনদেনের দায়িত্বে রয়েছেন সড়ক বিভাগের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আশরাফ। তার মাধ্যমেই চলে কোটি টাকার ঘুষের আদান-প্রদান।

৩ কোটি টাকার স্থাপনার বিল ১৬ কোটি!

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে ইকরামুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেখানে স্থাপনার মূল্য ৪-৫ গুণ বাড়িয়ে বিল পাসের অভিযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ঝর্ণা ফিস ফিড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাত্র ২০ ফুট টিনের স্থাপনার প্রকৃত মূল্য যেখানে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা হওয়ার কথা, সেটি পাস হয় ১৬ কোটি টাকায়। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহনেওয়াজ ঘুষ দেন ৩ কোটি টাকা।

জানা গেছে, পুরো বিলের অংশ থেকে জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারাও পান নজরানা। তবুও শাহনেওয়াজের পকেটে ঢুকেছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। যদিও শাহনেওয়াজ বিষয়টি নিয়ে মোবাইলে কথা বলতে রাজি হননি।

মুক্তিযোদ্ধাকেও দিতে হয়েছে দেড় কোটি টাকা

সাহেপ্রতাব এলাকার ভূঁইয়া সিএনজির মালিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া জানান, ৩২ কোটি টাকার বিল পেতে তাকে দিতে হয়েছে ইকরামুলকে দেড় কোটি টাকা ঘুষ।

‘দেখা না দিলে বিল কমে যায়’

জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ফাইল গণপূর্ত বিভাগে এলেই সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ করতে হয় ইকরামুলের সঙ্গে। দেখা না করলে বিল কমিয়ে দেওয়া হয়। ঘুষ দিলে মূল্য নির্ধারণের নামে তৈরি হয় নতুন হিসাব। অতিরিক্ত টাকা পেয়ে অভিযোগ করার সুযোগও থাকে না।

পটুয়াখালী ও ঢাকায় সম্পদের পাহাড়

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইকরামুল হাসান চৌধুরী তার নিজ জেলা পটুয়াখালী ও শ্বশুরবাড়ি ভোলাতে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। ঢাকাতেও নামে-বেনামে কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট।

“আমি স্যারের নির্দেশে কাজ করি”

অনুসন্ধানকারীরা একাধিকবার চেষ্টা করেও অফিসে ইকরামুলকে পাননি। মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,
“আমি এখানে অনেকদিন যাবত আছি, আমি যা কিছু করি স্যারের নলেজে করি। আপনারা স্যারের সাথে কথা বলেন। আমি কোনো বক্তব্য দিবো না।”

“সাগর চুরি হয়েছে, পুকুর নয়”

স্থানীয়দের অভিযোগ, “এখানে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে।” গণপূর্ত অফিসে যোগাযোগ করলে কর্মরত স্টাফরা বলেন, “এগুলো আগের অফিসার দিয়েছে, আমরা কিছুই জানি না। আপনারা যত পারেন দিছেন, আমাদের কোনো সমস্যা নাই।”

Daily Frontier News