মাসুদ রানা বাবুল নরসিংদী ক্রাইম রিপোর্টার:-
বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যাঁর নাম সম্মান ও আস্থার প্রতীক, যাঁর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ দেশজুড়ে হাজারো অনুসারী, সেই ড. আবদুল মঈন খান আজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি শুধু নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সংসদ সদস্য বা তৃণমূলের নেতা নন— তিনি বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির একজন বর্ষীয়ান অভিভাবক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে, যা ড. মঈনের ক্লিন ইমেজে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে।
‘মিল্টন’ নামের গলার কাঁটা
পলাশ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া মিল্টন ড. মঈন খানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সেই পরিচয়ের আড়ালে এখন তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার, দখলদারিত্ব এবং কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ড. মঈন খানের বিদেশ অবস্থানের সুযোগে ‘কুতুব’ বনে গেছেন মিল্টন। ঘোড়াশাল ও পলাশের ১২৮টি মিল-কারখানাসহ এলাকায় পরিবহন ও ব্যবসা খাতে তার ‘সিন্ডিকেট’ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মিল-কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ, পরিবহন ঠিকাদারি এবং পরিত্যক্ত মালামাল বিক্রির নামে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে এ সিন্ডিকেট।
সার কারখানা দখলে— সিন্ডিকেটের বড় আয়
বিশেষ করে ঘোড়াশাল সার কারখানা এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বলেই দাবি স্থানীয়দের। মিল্টনের চার ভাই— শামীম, আমিনুল, সাখাওয়াত ও সোহেল— সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছেন এখানকার চাঁদাবাজি। একটি ট্রাক থেকে গড়ে ৭০০ টাকা করে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা চাঁদা সংগ্রহ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতার অপব্যবহারে টেন্ডার লুটপাট
স্থানীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতার প্রভাবে মিল্টন দুটি ঠিকাদারি ফার্ম— মেসার্স জাহাঙ্গীর এন্টারপ্রাইজ ও জেরিন সিকিউরিটি— নিজের নামে করে নিয়েছেন। এর মাধ্যমে চলমান টেন্ডার, শ্রমিক নিয়োগ ও পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। এসব ফার্মে অদক্ষ শ্রমিক ব্যবহার করা হচ্ছে, যা শুধু আইনের ব্যত্যয়ই নয়, শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ
এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত মালামাল, ইলেকট্রিক তার, লোহা, তামা, কপার ইত্যাদি ট্রাকযোগে বাইরে পাচার করে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব মালামালের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি হতে পারে। মিল কর্তৃপক্ষ আনসার ও পুলিশের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করলেও সিন্ডিকেটের কার্যক্রম থেমে থাকেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের উদ্বেগ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট একজন জাতীয় নেতার নামে অপপ্রচার ও প্রশ্ন তুলতে যথেষ্ট। বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া মিল্টনের পিএস পরিচয় ব্যবহার করে চলমান এই দখল ও চাঁদাবাজি শুধু ড. মঈন খানের ব্যক্তিগত ইমেজ নয়, বিএনপির রাজনৈতিক শুদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ড. মঈন খান এখনো নীরব
এতসব অভিযোগের মাঝেও এখনো মুখ খোলেননি ড. আবদুল মঈন খান। নীরব আছেন বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া মিল্টনও। অথচ সময় এসেছে বিষয়টি খোলাসা করার, কারণ সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী সমাজ ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছেন— নেতার ইমেজ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের।
—
উপসংহার:
ড. আবদুল মঈন খান যেমন জাতীয়ভাবে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, তেমনি তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিতর্ক জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তাই এখনই প্রয়োজন নিরপেক্ষ তদন্ত ও দলীয়ভাবে স্পষ্ট অবস্থান। অন্যথায়, একটি ‘সিন্ডিকেট’ একটি নেতার দীর্ঘদিনের অর্জিত মর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে।
আপনি চাইলে আমি এই প্রতিবেদনটি নিউজ সাইটে বা প্রিন্ট পত্রিকায় প্রকাশযোগ্যভাবে ফরম্যাট করে দিতে পারি।
Copyright © 2025 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics