Daily Frontier News
Daily Frontier News

ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার পাঁয়তারা, ফ্যাসিস্টমুক্ত ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের দাবি আন্দোলনকারী সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের

 

স্টাফ রিপোর্টার :-

ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার পাঁয়তারা করছে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দোসররা। আর এই অপতৎপরতার নেতৃত্বে রয়েছেন সুযোগ সন্ধানী, অসৎ সাংবাদিকতার প্রবক্তা ও বদমেজাজী হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল মাহমুদ। তাঁর গ্রুপটিতে রয়েছেন ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত একদল ফ্যাসিস্ট সাংবাদিক। এই চক্রটি সম্প্রতি চর দখলের মতো ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব দখল করেছেন। পতিত সরকারের ক্ষমতার পুরো সময়ে স্বৈরাচারী সরকারের মন্ত্রী-এমপি-মেয়র ও অন্যান্য নেতাকর্মীদের তোষামোদি করে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তারা ফ্ল্যাট, বাড়ি-গাড়ির মালিকও বনে গেছেন। বেগতিক পরিস্থিতিতে এরা রীতিমতো ভোল পাল্টে এখন বিএনপি ও জামায়াতের শেল্টার নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

সম্প্রতি ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে অনির্বাচিত ও অবৈধভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করা কর্মকর্তারা দিকে তাকালেই দিবালোকের মতো পরিস্কার হয়ে যাবে। সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদ ভাগিয়ে নেওয়া নওয়াব আলী ও জাহাঙ্গীর কবির জুয়েল সরকারি কর্মচারী ও অপেশাদার সাংবাদিক। কিন্তু তাঁরা কোন খুঁটির জোরে এই পদে অধিষ্ঠিত হলেন? জুয়েল ঢাকা থেকে প্রকাশিত যে দৈনিকটিতে কাজ করেন সেটি সরাসরি আওয়ামীপন্থী পত্রিকা হিসেবেই পরিচিত। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ওই পত্রিকাটির সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ফ্যাসিস্টের দোসরদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপরেও জুয়েল কীভাবে পত্রিকাটির প্রতিনিধি হিসেবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এই প্রশ্নও সবার মাঝে। অপরদিকে, নওয়াব আলী ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানীক) সম্পাদক হয়েও এই কমিটিতে কীভাবে জায়গা করে নিয়েছেন? এখন কী হঠাৎ জামায়াত আদর্শ ধারন করা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল মুখে কুলুপ এঁটেছেন?

একইভাবে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া যুগ্ম সম্পাদক ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নেতা মো.শাহজাহান, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেত্রী রাশিদা মহিউদ্দিনের ফুটফরমায়েশ খাটা ও পলাতক সাবেক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু’র সকল অপকর্মের পার্টনার, একটি বিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্যের হোতা আবু সালেহ মোহাম্মদ মুসা ক্রীড়া সম্পাদক, প্রয়াত মতিয়া চৌধুরীর স্বামীর সম্পাদিত দৈনিক সংবাদের সাবেক প্রতিনিধি শরীফুজ্জামান টিটু সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক, ত্রিশালের পলাতক সংসদ সদস্য এবিএম আনিসুজ্জামানের ‘ক্যাশিয়ার’ এস এম হোসাইন শাহিদ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, নাট্য ও প্রমোদ সম্পাদক আদিলুজ্জামান আদিল, নির্বাহী সদস্য পদে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর ময়মনসিংহের এজেন্ট, ময়মনসিংহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত’র ব্যবসায়ীক অংশীদার ও আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত শ্রী অমিত রায় সদস্য পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের কারখানায় রূপ দেওয়া সাবেক মন্ত্রী শ.ম.রেজাউল করিমের বিশ^স্ত সিপাহশালার ড.ইয়াহিয়া মাহমুদ কামালকেও সাংবাদিক পরিচয়ে বিতর্কিত এই কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করতে ছাড়েননি গফরগাঁও থেকে এক কাপড়ে পালিয়ে আসা সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল মাহমুদ। আওয়ামী লীগের লেজুরবৃত্তি ও অপসাংবাদিকতার দায়ে দৈনিক সমকাল থেকে বহিস্কৃত মীর গোলাম মোস্তফাও সদর্পে জায়গা পেয়েছেন ঘৃণাভরে প্রত্যাখিত কমিটিতে। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল ইসলাম একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তিনি জেলায় সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন। তিনি কখনও সাংবাদিকতা না করলেও ‘প্রেসক্লাব ফর প্রেসম্যান’ এই নীতি ভেঙে কীভাবে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সভাপতি পদ নিজের কব্জায় নিলেন এবং তিনি কেন ফ্যাসিস্ট মহলকে ‘শেল্টার’ দিয়ে নিজেকে বিতর্কিত করছেন, এমন সব প্রশ্নও ময়মনসিংহের পেশাদার সাংবাদিকদের ভেতরে-বাইরে উচ্চারিত হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, এই কমিটিতে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর জাপা (রওশন) বলয়ের মহানগর সাধারণ সম্পাদক, গৌরীপুর থেকে দলটির একাধিকবার মনোয়নপ্রত্যাশী ও স্বঘোষিত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন, ন্যাপ নেতা ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের বড় ভাই মোঃ জিয়া কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে তোড়জোড় শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের আস্কারায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল মাহমুদ নির্বাচন ও ভোট ছাড়াই ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের কথিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে এক পক্ষের বর্জন ও অনুপস্থিতির পরেও বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ফ্যাসিবাদের প্রতীক হিসেবে পরিচিত শ্রী অমিত রায় অনির্বাচিতদের হাতে প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের সচেতন সাধারণ মহল এমনকি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়েও ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিনা ভোট, রাতের ভোট, ডামি-স্বামী ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনী সংস্কৃতিকে ‘ঘৃণায়’ পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। নিজেদের অপকর্মের জন্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হলেও তাঁর রেখে যাওয়া অপসাংবাদিকতার রক্ষক এসব ব্যক্তিরা ফ্যাসিবাদকে পুন:প্রতিষ্ঠা করতে নানা ফন্দিফিকির আঁটছে, এমন কথাবার্তা এখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সাহসী-বীর ছাত্র-জনতার বিপ্লবের আকাক্সক্ষাকে বিনষ্ট করার অপতৎপরতা এখন দৃশ্যমান। ময়মনসিংহে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা এসব দেখেও কী না দেখার ভান করবেন? তাঁরা কী নীরবেই সব সহ্য করবেন? এখনও কী তাঁরা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না? এসব প্রশ্ন উচ্চারিত হচ্ছে ময়মনসিংহের নানা প্রান্তে, দিকেদিকে। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবকে ফ্যাসিস্টদের কবল থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে আক্ষরিক অর্থে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ও শহীদদের মর্যাদাকে যথাযোগ্যভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এখন সময়ের দাবি।

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সংস্কার আন্দোলনকারীরা চলতি বছরের ২ জানুয়ারি প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্বৈরাচারের তক্ততাউস নাড়িয়ে দেয়। ওইদিন সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে মূখ্য সংগঠক সমন্বয়কারী সাংবাদিক নেতা শিবলী সাদিক খান বলেন, ‘অপেশাদার সাংবাদিক সদস্যদের বাতিল করে ‘প্রেসক্লাব ফর প্রেসম্যান’ গঠনের প্রয়োজনে সকল পেশাদার সাংবাদিক সদস্যদের নামের তালিকা প্রণয়ন, এডহক কমিটি গঠন, সম্মিলিত সাধারণ সভায় খসড়া প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র, সংযোজন বিয়োজন, পরিমার্জন করে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি বিতর্কমুক্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুতের মাধ্যমে নির্বাচন ঘোষণা করার পাশাপাশি অবধৈ পন্থায় ঘোষিত সাইফুল ইসলামের গংদের কমিটি অবিলম্বে বাতিল করতেও পুনরায় জোর দাবি করেছেন শিবলী। এসব দাবিতে সাংবাদিকরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনে সাংবাদিকদের তালিকা এবং প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র দাখিল করেছেন। জেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুনরায় সমঝোতা বৈঠক আহ্বান করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও একই প্যানেলভুক্ত নেতৃবৃন্দ নির্বাচন ছাড়া বিনা ভোটে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের দায়িত্বভার নিয়েছেন। দায়িত্বভার গ্রহণকালে অপর প্যানেলের সদস্যরা যোগ দেননি। ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব নির্বাচনে সিডিউল অনুযায়ী গত ১৫ ডিসেম্বর মনোনয়ন দাখিল, ১৮ ডিসেম্বর বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ ও ২৭ ডিসেম্বর নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু মনোনয়ন জমাদানের দিন একপক্ষকে বাঁধা দেওয়া হয়। মনোনয়ন জমাদান কক্ষে তালা লাগানো ও রিটার্নিং অফিসারকে হুমকি প্রদানসহ ৩ নির্বাচন কর্মকর্তার একযোগে পদত্যাগের ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক সভা পিছিয়ে ২ জানুয়ারি করা হয়। সেদিনই কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি ঘোষণার দিন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সাংবাদিকরা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কায়দায় নিজেদের প্রতিবাদ জানান। কিন্তু স্বৈরাচারের দোসররা এ ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এখন আন্দোলনকারী সাংবাদিকদের নানা ‘ট্যাগ’ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ করে তাদের সুনামহানির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকারী সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এমন অসৎ সাংবাদিকতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

Daily Frontier News