ছাতক প্রতিনিধিঃ-
সুনামগঞ্জের ছাতকে টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির ২২৭টি প্রকল্পের ঘুষের টাকা হজম করতে ৫দিন ধরে লাপাত্তা পিআইও কেএম মাহবুবুর রহমান। ছুটি না নিয়ে তিনি গেল শনিবার থেকে কার্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় কাজ করে বিলের টাকা পাচ্ছেন না প্রকল্পের কমিটির সদস্যরা।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ছাতকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে যোগদান করেন কেএম মাহবুবুর রহমান। এখানে যোগদানের পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গড়ে তুলেন একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সম্প্রতি কাজ না করে অসংখ্য প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের বিস্তর অভিযোগ ওঠে ওই দূর্নীতিবাজ পিআইওর বিরুদ্ধে। বছরের পর বছর এখানে থাকা অবস্থায় প্রকল্পের ঘুষের টাকায় নিরবে করেছেন সম্পদের পাহাড়। তার অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও রহস্যজনক কারণে থেকে যায় বহাল তবিয়তে।
সর্ব শেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর কৌশলে এখান থেকে বদলীর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ওই পিআইও। গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি ১৪ মে পর্যন্ত ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় দুই মাস ওই পিআইওর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন দোয়ারাবাজারের পিআইও লুৎফুর রহমান। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির ২২৭টি প্রকল্পের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে ছাতকের পিআইওর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে পিআইওকে ১৬ মে সন্ধ্যায় বাসায় ডাকেন ইউএনও। উপস্থিত ছিলেন ছাতক পিআইও কার্যালয়ের কার্যসহকারি নাজমুল ইসলামও। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় এবং প্রকল্পের কোন ধরণের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ছাড় দেওয়া হবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন ইউএনও।
জানা গেছে, পর দিন শনিবার অফিস করেন নি পিআইও কেএম মাহবু্বুর রহমান। ওইদিন রাতে ইউএনও বরাবরে তিন দিনের ছুটি চেয়ে একটি আবেদন লিখে ইউএনওকে না দিয়ে নিজ কার্যালয়ের টেবিলে রেখে কৌশলে ছাতক ত্যাগ করেন ওই দূর্নীতিবাজ পিআইও। ঘুষ দূর্নীতির টাকা হজম করতে ওই পিআইও জেলা প্রশাসকের কাছে ছাতকের ইউএনও ও পিআইও অফিসের কার্যসহকারির বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি কার্যসহকারি নাজমুল ইসলামকে এখান থেকে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
উপজেলার মুক্তিরগাঁও গ্রামের ইজাজুল হক রনি জানিয়েছেন, তিনি মুক্তিরগাঁও গ্রামের রাস্তার উভয় পাশে মাটি ভরাট কাজের সেক্রেটারি। তার কাছ থেকে সরকারি খরচের নামে ২৪হাজার ৫শ’ টাকা নিয়েছেন পিআইও কেএম মাহবুবুর রহমান। হাসনাবাদ-নয়া লম্বাহাটি রাস্তায় মাটি ভরাট কাজের সেক্রেটারি বাহাউদ্দিন শাহীর কাছে ১২ হাজার টাকা চেয়েছেন ওই পিআইও। এছাড়া প্রকল্পের খরচের নামে ওই পিআইও প্রকল্প কমিটির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা পিআইও অফিসের কার্য সহকারি নাজমুল ইসলাম বলেন, ইউএনও ও পিআইওর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। শনিবার থেকে পিআইও
অফিসে নেই। শুনেছেন ওই পিআইও তাকে এখান থেকে বদলি করিয়েছেন। এ বিষয়ে পিআইও কেএম মাহবু্ুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন। দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান প্রকল্পের টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে ইউএনও পিআইও’র মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও নাজমুলের বদলির বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, পিআইও গত শনিবার থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ দূর্নীতির অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিবেন।
Copyright © 2025 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics