শিবলী সাদিক খানঃ-
ময়মনসিংহের গফরগাঁও ইউএনও ও বিএনপি নেতার বিরোধ বেড়েই চলছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি ঘোষণা। তবে, মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে উপজেলার সকল সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) সকালে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে স্থানীয় সকল সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
স্থানীয় একটি সুত্র জানায়, নিয়মবর্হিভুত ভাবে পাঁচবাগ গলাকাটা মৌজার বিআইডব্লিউটি’র বালু নিতে ইউএনও রুবাইয়া ইয়াসমিনকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছিল ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম। কিন্তু, ইউএনও নিয়মবর্হিভুত ভাবে বালু দিতে অস্বীকৃতি জানান। এসব নিয়ে ইউএনও’র সাথে বিএনপি নেতার দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ ঘটনায় গত রবিবার সন্ধ্যার পর ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম তার দলীয় কর্মীদের নিয়ে সকালে উপজেলা পরিষদ ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন। এমন সংবাদ পেয়ে উপজেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউএনওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেন। পরে সকালে হঠাৎ বিপএনপি নেতা কর্মীরা তাদের কর্মসুচি বাতিল করে। অপরদিকে উপজেলা পরিষদের আয়োজনে স্থানীয় সকল দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্র জানায়, ইউএনও রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হেনস্তার বিরুদ্ধে তারা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে এসেছেন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মানববন্ধনে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের সুশৃঙ্খল কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে ইউএনওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে হেয় করার চেষ্টা চলছে, যা বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এই ষড়যন্ত্র অবিলম্বে বন্ধ না হলে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মানববন্ধনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমির সালমান রনি বলেন, ইউএনও বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঐক্যবদ্ধভাবে আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবেন।
এসময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। এই দ্বন্দ্বের কারণে গফরগাঁওয়ের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন নাগরিক সমাজ। তারা আশা প্রকাশ করেন, প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এবিষয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, আমরা নানাবিধ অনিয়মের কারণে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসুচি দিয়েছিলাম। এই ইউএনও শেখ হাসিনার সময়ের নিয়োগপ্রাপ্ত একটা ফ্যাসিস্ট। তার কর্মকান্ড অনেকটা ফ্যাসিস্টদের মতই। সে আওয়ামী লীগের সময় যে ভাবে প্রশাসন চালাতো, এখনও ওই ভাবেই প্রশাসন চালায়। তার কাছে কোন পজিটিভ কাজ নিয়ে গেলেও ৭% ঘুষ নেয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পলাতকদের বেতন ভাতা উত্তোলনে সহায়তা করে বিভিন্ন নিয়োগ বানিজ্য করে। উপজেলায় ৪১ টা ইটের ভাটা আছে। যে গুলো থেকে সে টাকা নেয়। সরকারি যে সব সাহায্য আছে কম্বল বিতরণ, ঢেউ টিন বিতরণ, দুম্বার মাংস জনগণকে না দিয়ে কোথায় দেয়, তাও কেউ জানে না। তারপর শহীদ পরিবারের(একজন উত্তরায় ও একজন মাওনা শহীদ হয়ছিলো) লোকজন দেখা করতে গিয়েছিল ইউএনও’র সাথে সাক্ষাত করতে, সে তাদের সাথে অশোভন আচরণ করছে। বেসরকারি যত স্কুল আছে, বেতন উত্তোলন করে এখন উনিই সব কোন কমিটি নেই। উনার একজন পিএস আছে আমিনুল ইসলাম মুক্তা এগুলো থেকে টাকা নেয়। খাদ্য বান্ধব ওএমএস থেকে টাকা নেয় এবং বেশি ভাগ আওয়ামীলীগের লেকজনকেই নিয়োগ দিয়েছে, বিএনপির কিছু লোক ছাড়া। বালি যে বিক্রি হয়, ইউএনও এখন বালী ব্যবসায়ী হয়ে গেছে। এরপর অনেক কারন রয়েছে গত উপজেলা নির্বাচনে নিজেই ফলাফল ঘোষণা করছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। যেমন বিজয় দিবসসহ এগুলোতে সে কাউকে দাওয়াত দেয় না। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় এগুলোতে কাউকে পরোয়া করে না এরকম নানাবিধ কারণ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়ছিল। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দলীয় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা এখন প্রশাসনের সাথে কোন বিরোধে যাওয়া যাবে না। প্রশাসন আমাদের আশ্বস্থ করছে উনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। তাই, আমাদের কর্মসুচি বাতিল করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি নেতা আলমগীর মাহমুদ আলম সাহেব আমার কাছে কিছু অবৈধ তদবির করছিল, তারমধ্যে ছিল চর আলগী ইউনিয়ন পরিষদটা সরকারী ভবনে না নিয়ে উনার পছন্দ মতন জায়গায় নিয়ে নিতে। কিন্তু সরকারী ভবন রেখে অন্য কোথাও নেওয়া সম্ভব না। তাছাড়া সরকারি ভবনটা ব্যবহারে উপযোগী। আগে ছিল পুরাতন চেয়ারম্যান বাড়ি, সেখান থেকে নিয়ে সরকারী ভবনে আমি শিফট করেছি। এটা উনার তদবির হিসেবে উনার বাড়িতে নিয়ে যাই নাই। উনি বলে আগের চেয়ারম্যান তো তার বাড়িতে নিয়েছিল।আপনি কেন পারবেন না ইউএনও হয়ে আমার বাড়িতে দিতে বা আমার পছন্দ মতন জায়গায় দিতে। আগের চেয়ারম্যানরা তো গায়ের জোরে অনেক কিছু করছে, আমি তো সরকারি কর্মকর্তা, নিয়মের বাইরে আমি পারি না। এটা নিয়ে উনার উপর ক্ষোভ আমার প্রতি। দ্বিতীয়টা হলো, পাঁচবাগ গলাকাটা মৌজার বিআইডব্লিউটি’র বালু আছে। ওই বালু নিয়মবর্হিভুত ভাবে নিতে আমাকে চাপ দেন৷ আমি বলেছি, আমি অকশনে যাবো, আগেও অকশন হয়ছিলো আপনিও অকশনে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু আমাকে তো বলছে এমন না। তিনি ডিসি স্যারকেও বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে আসছে ওই বালু তাকে দিতে।
Copyright © 2025 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics