Daily Frontier News
Daily Frontier News

রাজস্ব ফাঁকি নিয়ে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে চসিক মেয়রের কঠোর বার্তা,,

 

মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরোচীফ

রাজস্ব বিভাগের আটটি সার্কেলের আওতায় নগরের ৪১ ওয়ার্ড থেকে পৌরকর ও ট্রেড লাইসেন্স ফিসহ যাবতীয় রাজস্ব আদায় করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সংস্থাটির নিজস্ব আয়ের প্রায় পুরোটাই আসে রাজস্ব বিভাগের মাধ্যমে। অর্থাৎ চসিকের আয়ের অন্যতম যোগানদাতা সার্কেলগুলো। এরপরও নানা সমস্যায় জর্জরিত বেশিরভাগ সার্কেল অফিস। কোনোটিতে নেই বসার পর্যাপ্ত জায়গা। সংকট আছে চেয়ার–টেবিল, আলমারি–কেবিনেটসহ অন্যান্য আসবাবপত্রের। গতকাল চসিকের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এসব অভাব–অভিযোগ তুলে ধরেন সার্কেলগুলোর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি সার্কেলের বিভিন্ন সংকট নিরসনের আশ্বাস দেন। বলেন, পাশে থাকব। এছাড়া প্রত্যেকটি সার্কেল কর্মকর্তাকে কার কী সমস্যা তা উল্লেখ করে চাহিদাপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সভায় অফিসের নানা সমস্যার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কর আদায়কারীরা তাদের অভাব–অভিযোগ তুলে ধরেন। বেশিরভাগের অভিযোগ যাতায়াত সমস্যা নিয়ে। তারা অফিস থেকে মোটরসাইকেল বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান। দাবি ছিল চাকরি স্থায়ীকরণেরও।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজস্ব সার্কেল–৮ এর অফিস বন্দরটিলায় স্থানান্তর করা হবে। ওই সার্কেল অফিসের আওতাভুক্ত এলাকার মধ্যে পতেঙ্গাসহ আশেপাশের ওয়ার্ডগুলো রয়েছে। দূরে হওয়ায় যাতায়াত ভোগান্তি পোহাতে হয় সেবাগ্রহীতাকে। তাই এলাকার লোকজনের সুবিধার্থে সার্কেলটির অফিস দেওয়ানহাট থেকে নিয়ে যাওয়া হবে বন্দরটিলার স্থানীয় ওয়ার্ড অফিস কার্যালয়ে।

এছাড়া প্রতিটি সার্কেলে ন্যূনতম দুটি সিএনজি প্রদান, অস্থায়ী কর আদায়কারীদের পরিবহনের ব্যবস্থা এবং বহদ্দারহাট ২ নং সার্কেল অফিসের জন্য পাশে চসিকের মালিকানাধীন অন্য একটি মার্কেটে দ্রুততম সময়ে বিকল্প কক্ষ চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রভাবশালীদের নিয়ে কঠোর বার্তা : ধনী শ্রেণির অনেকে রাজস্ব ফাঁকি দিতে চান মন্তব্য করে মেয়র বলেন, কেউ প্রভাব খাটিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলে তা কীভাবে আদায় করতে হবে জানি। রাজস্ব বিভাগের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রভাবশালীদের কোনো চাপে রাজস্ব আদায় বন্ধ করবেন না। রাজস্ব আদায় ঠেকাতে কেউ চাপ দিলে তিনি যত প্রভাবশালীই হোক না কেন আমি তা গ্রাহ্য করব না। আপনারা আইনের মধ্যে থেকে কাজ করলে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি আপনাদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমি আপনাদের পাশে থেকে তা ঠেকাব। আপনারা আইন অনুসরণ করে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ভূমিকা রাখুন।

মেয়র বলেন, রাজস্ব প্রদানে যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য আপিল বোর্ড বসিয়ে নাগরিকদের রাজস্ব যৌক্তিক করা হয়েছে। এ সময় মেয়র রাজস্ব সার্কেলের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের চলতি অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারের মধ্যে বিল জারির নির্দেশনা দেন।

রাজস্ব আদায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যে রাজস্ব আদায় করে তা দিয়ে শহরের সড়ক উন্নয়ন থেকে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন সেবামূলক খাতে ব্যয় করা হয়। এছাড়া এই রাজস্ব দিয়ে ৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫৬টা স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। চট্টগ্রামের উন্নয়নব্যয় নির্বাহে স্বনির্ভরতা গড়তে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব চসিকের জন্য রক্তের মতো কাজ করে। রাজস্ব আদায়ে দায়িত্ব পালনকালে কোনো কর্মী যদি হেনস্থার শিকার হন তাহলে হেনস্থাকারী ব্যক্তি যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ : সভায় রাজস্ব সার্কেল–৫ এর এক কর্মকর্তা ২২ নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সলিম উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ করেন। ওই কর্মকর্তার দাবি, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে চাপাচাপি করতে নিষেধ করেন কাউন্সিলর। স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে সহযোগিতা করেন না বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সলিম উল্ল্যাহ বলেন, আমি সভায় ছিলাম না। কেউ আমার কাছে সহযোগিতার জন্য আসেনি। অসহযোগিতার অভিযোগটি মিথ্যা। কেউ আসলে অবশ্যই সহযোগিতা করব।

সভায় উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মো. ইসমাইল, মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিম।

Daily Frontier News