Daily Frontier News
Daily Frontier News

মানব জীবনের কিছু বাস্তব রূপ জীবন সঙ্গী কথা।

 

শ্রী মিশুক চন্দ্র ভুঁইয়া
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।

জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
বিয়ে প্রতি রাতের ৩০ মিনিটের জন্য না। বাকি ২৩ ঘন্টা ৩০ মিনিটের কথাটাও মাথায় রাখা উচিত। নয়তো জীবনটা তছনছ হয়ে যাবে।
বিয়ে কেন করে সেটা না জেনেই অনেকে বিয়ে করছে। কেউ বিয়ে করছে নিজের বিলাসী শখ পূরণ করতে। কেউ বিয়ে করছে সামাজিক স্ট্যাটাস তৈরি করতে। কেউ বিয়ে করছে আবেগে। কেউ বিয়ে করছে খুশিতে। কেউ বিয়ে করছে ঠ্যালায় পড়ে। কেউ বিয়ে করছে ট্রেন্ডি হতে।
নিজেকে মূল্যায়ন না করে যার-তার সাথে ঘর বাঁধার মাশুল চড়া মূল্যে দিতে হয় এক সময়।
বিয়ে একটা প্রয়োজনীয়তা। প্রথম প্রয়োজন বৈধ উপায়ে যৌ*ন চাহিদা পূরণ করা। এরপর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাওয়া। একজন সোল মেট পাওয়া।
মানসিকতা না মিললে, চিন্তা-চেতনার মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকলে, জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক না হলে গলার কাঁটা নিয়ে সারাটা জীবন পার করতে হয়। যারা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন, তারা একসময় বিচ্ছেদের মতো জীবন অচল করে দেওয়া সিদ্ধান্তের পথে পা বাড়ান।
কেউ কারো মতো হুবুহু হতে পারবে না। এ কথা যেমন সত্য। আবার একে অপরের হৃদয়টা বুঝতে না পারলে দুজনের মধ্যে দূরত্ব যে সৃষ্টি হবে, সেটাও কিন্তু সত্য। তাই মাথার ওপরের পাখাটা ধীরে চলবে নাকি দ্রুত গতিতে, রাতের খাবার কি দেরি করে খাবে নাকি আগেভাগে, খাবারের ঝাল কিংবা লবন কমবেশি করার ব্যাপারে একে অপরকে স্যাক্রিফাইস করতেই পারে। তবে তার মানে এই নয় যে দুজন মানুষ আলাদা দুই জগতের বাসিন্দা। দুজনের মৌলিক চাওয়া-পাওয়া একেবারেই ভিন্ন হবে।
চোখের ভালো লাগার একটা বিষয়ও কিন্তু আছে। এটা মৌলিক চাহিদা। সঙ্গীকে যদি ভালো নাই লাগে, তখন বিয়েটা অর্থহীন হয়ে যায়। কাঁধের ওপর স্রেফ ‘বিবাহিত’ তকমাটাই থাকে; সঙ্গীর হাতটা পাওয়া যায় না।
অথচ কান্না করার জন্য সঙ্গীর কাঁধে মাথা রাখাটা প্রাপ্য অধিকার। বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে সকল দুঃখগুলো এক নিমিষেই পানি করে ফেলার জন্য কোনো অনুমতি বা পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করতে যেন না হয়, সেটার নিশ্চয়তা থাকতে হয়। একে অপরকে ঠিক সেভাবেই বুঝবে, যেমনটা তারা নিজেকে বুঝে।
বিয়ের আগে কারো মনের ভেতরে গিয়ে তো আর এসব যাচাই করা যায় না। তাহলে উপায় কি? সংসার জীবন তো তাহলে আর হবে না।
না, ব্যাপারটা সেরকম না।
ভালোবাসা মানে শুধু পাওয়া না। ভালোবাসলে ত্যাগও করতে হয়। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার উদাহরণ হলো, জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর সন্তুষ্টির জন্য নিজের পছন্দকে বিসর্জন দেওয়া। তবে তার মানে এই নয় যে, অন্যায়, ভুল ও অযৌক্তিক আবদারগুলোকেও প্রশ্রয় দিতে হবে।
দু’জনের চাওয়া-পাওয়ার মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় করে নিতে হবে। আলোচনায় বসে এসব নিয়ে চুক্তি করবে? উঁহু। তা না। যা হবে নিঃশব্দে। দুজনের ভেতরে আরো দুটো সত্তা আছে। কথা হবে ওই দুটো সত্তার মাঝে। এর নাম নীরব ভালোবাসা। তারা সংসার করছে। দৈনন্দিন জীবনে আট/দশটা দম্পতি যা করে তারাও তাই করছে। তবে দুজনের ভেতরেই নীরব প্রচেষ্টা চলছে–কীভাবে সঙ্গী/সঙ্গিনীকে সুখি, সন্তুষ্ট রাখা যায়। সে কি ভালোবাসে, তার পছন্দ-অপছন্দ, সঙ্গী/সঙ্গীনির কাছে তার চাওয়াটা কি ইত্যাদি।
ভালোবাসা দেওয়ার অনেকগুলো ধরণ। কিছু ধরণের ভালোবাসা চেয়ে নিতেই মজা। ‘সে শুধুই আমার’-এর অধিকার খাটানোর একটা তৃপ্তি কাজ করে। আবার কিছু ধরণের ভালোবাসা চেয়ে নেওয়ার মধ্যে তৃপ্তি নেই। মনে চায় সে নিজে থেকে আমার চাওয়াটা বুঝে নিক।
দু’জনের বোঝাপড়াটা এমন হবে যে–কোনটা রাগ আর কোনটা অভিমান, কোনটা মন খারাপ আর কোনটা মনের কষ্ট; মুখে না বললেও অপরজন বুঝে নেবে।
এটা দীর্ঘ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে আয়ত্ত করতে হয়। ভালোবাসার সংসার চর্চা করার বিষয়। এটা কোনো প্রতিযোগিতা না। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতিযোগী না; বরং দুই দেহ এক হৃদয়।

Daily Frontier News