Daily Frontier News
Daily Frontier News

বেঁচেও মৃত কারামুক্ত লাকসামের রুবেল

 

জামাল উদ্দিন স্বপন কুমিল্লা 

 

আমি বেঁচেও মৃত। দীর্ঘ ছয়মাস ধর্ষনের মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে জেল খাটলাম।আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানীর শিকার হলাম। জামিনে মুক্ত হয়ে এখন সবকিছু অচেনা মনে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে ও সমাজে মুখ দেখাতে কষ্ট হয়। মনে হয় বেচে থেকেও মরে গেছি। একথাগুলো অক্ষেপ করে বলেন কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরসভার বাতাখালীর বাসিন্দা রুবেল হোসেন।

ডুমুরিয়া গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আঁখিকে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে দীর্ঘ ৬ মাস কারাভোগ করে রুবেল। সাক্ষী প্রমান না থাকায় আদালত ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। যাতে রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে প্রথমিকভাবে নির্দোষ প্রমানিত হয় সে। শর্ত সাপেক্ষে জেলা জজ আদালত রুবেলকে সম্প্রতি জামিন দেয়। গত ২ মার্চ রুবেলের মুখোমুখি হলে কান্না জড়িত কণ্ঠে তার জীবনের ৬টি মাস ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানায় সে।

রুবেলের মা শুমসুন্নাহার বলেন, হয়রানীর শিকার হয়ে আমাদের পরিবার সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। আমার সন্তানকে হয়রানীর বিচার চাই।
রুবেলের ভাই রায়হান কবীর বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনের কাছে ক্ষতিগ্রস্থ, হয়রানীর ক্ষতিপূরণ চাইবো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গ থেকে লাকসাম এসে রিকশা চালাতে শুরু করে শরিফুল ইসলাম ওরফে টেঙ্গিয়া।একপর্যায়ে বিয়ে করেন ডুমুরিয়া গ্রামের শাহানারা আক্তার (বেজিকে)। তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ২ মেয়ে ১ ছেলে। বড় মেয়ে সাহিদা আক্তার দু’বার অবৈধ গর্ভবতী হলে সাতবাড়িয়া গ্রাম থেকে সমাজচ্যুত হন। ছোট মেয়ে মৃদু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আঁখির বিরুদ্ধেও এলাকাবাসীর নৈতিক শৃঙ্খলের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রাত-বিরাতে যত্রতত্র ঘুরাঘুরি এই দুই কিশোরীর ওপেন সিক্রেট ব্যাপার। তাছাড়া তাদের ঘরে এলাকার ডজন খানেক বখাটে ও লম্পট চরিত্রের লোকজনের আনাগোনার জনশ্রুতি রয়েছে।

সম্প্রতি বড় বোনের পথ অনুসরণ করতে গিয়ে আঁখিও গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এলাকার কতিপয় টাউট ও ধান্দাবাজ বিষয়টি পুঁজি করে পূর্বশত্রুতার জেরে রুবেলকে ফাঁসানোর ফাঁদ পাতে।গর্ভবতী আখিকে শেখানো হয় রুবেলের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ দাখিলের। যাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আখির মা শাহানারা আক্তার (বেজি)। মা বেজি নিজেই মামলার বাদী সাজে। লাকসাম থানায় ১৬ আগস্ট ২০২২ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। আসামি করা হয় রুবেলকে। সেই সুত্রে চাক্ষুষ সাক্ষ্য প্রমান ছাড়াই অভিযোগের ভিত্তিতে এস আই আমিরুল ইসলাম অভিযুক্ত(?) রুবেলকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।

৩ মাস পর আখির ঘরে একটি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় শনাক্তের জন্য আদালত ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি টেস্ট রিপোর্টে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।আপাতত দৃষ্টিতে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পায় রুবেল। কিন্তু এই ডিএনএ রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে পুনরায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন আখির পরিবার।
এখন প্রশ্ন উঠেছে আঁখির ঔরসজাত সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় নিয়ে।
এলাকাবাসীর মতে আখিদের বাড়িতে যাতায়াতকারী হিসেবে ডুমুরিয়ার আবুল কাশেম, আঁখির নানা সুলতান ও আখির বাবা শরিফুল ইসলাম সহ এদের বাড়ীতে আনাগোনাকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা দরকার।
এ ব্যাপারে লাকসাম থানার এসআই তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু হেনা রেজা বলেন, সন্দেহের তালিকায় যাদের নাম পত্র পত্রিকায় এসেছে তাদের ব্যপারেও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ চলছে।

Daily Frontier News