Daily Frontier News
Daily Frontier News

পুজা পরিষদের সম্মেলন নিয়ে টান টান উত্তেজনা।। পুলিশ প্রশাসনের কড়া নজরদারী

 

প্রবীর চৌধূরী রিপন।।

দ্বিধাবিভক্তির মধ্য দিয়ে স্বার্থের অন্বেষণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা ও বিজয়নগর উপজেলা শাখার কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের রেশ ছড়িয়ে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সম্মেলনে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন আদালত। একই স্থানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দুই গ্রুপের সম্মেলন ডাকায় অনাকাক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে একটি আবেদনের উপর পর্যালোচনা শেষে গত ১১ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালত এ নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়া না হওয়া নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। দ্বিধাবিভক্ত পূজা উদযাপন পরিষদ এখন রূপ নিয়েছে ৪টি গ্রুপে। যে কোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কায় ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশও শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। সম্মেলনস্থলে করা হয়েছে পুলিশ মোতায়েন। তবুও উত্তেজনার রেশ যেন থামতে চাইছে না।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দময়ী কালীবাড়িতে ১৪ মে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ডাকেন পূজা উদযাপন পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একাংশের নেতৃবৃন্দ। এতে প্রধান অতিথি করা হয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের। একইস্থানে অপর একটি পক্ষ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দারসহ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরও আগে তৃতীয় আরেকটি পক্ষ পূজা পরিষদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সম্মেলন আয়োজনের বৈধতা নিয়ে আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। সর্বশেষ চতুর্থ পক্ষ কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দের কাছে নতুন একটি আহ্বায়ক কমিটি জমা দিয়েছেন। চতুর্মুখী কমিটি গঠনের কার্যক্রম নিয়ে পক্ষদের মাঝে বিরাজ করছে উত্তেজনা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হিন্দু সম্প্রদায়। আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারীর পর সম্মেলনকে ঘিরে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে পূজা উদযাপন পরিষদের একপক্ষের নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রাখছেন।
সূত্র জানায়-দ্বিধাবিভক্তি দলের একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য খোকন কান্তি আচার্য্য ও অপর অংশে আছেন সোমেশ রঞ্জন রায়। তৃতয়পক্ষে আছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা সুবোধ চন্দ্র দাস এবং চতুর্থ অংশে আছেন কাঞ্চন কুমার পাল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান- পূজা উদযাপন পরিষদের দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল এখন চরমে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভাঙ্গন-ফাটল দেখা দেওয়ায় এর রেশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এরই জেরে দীর্ঘদিন যাবত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়ও নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে বিভক্তি দেখা গেলেও সম্প্রতি সংগঠনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের স্বেচ্ছাচারীমূলক আচরণে পকেট কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন কারণে আদালতের শরনাপন্ন হন। গত ১৯ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের আইনজীবী রঞ্জিত মল্লিক বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন (যার নং দেঃ ১৯৬/২২)। এই মামলায় তিনি ৯ জনকে বিবাদী করেছেন। তিনি পূজা পরিষদের জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে এ মামলাটি আনয়ন করেন। এরপর গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ চন্দ্র দাস আদালতের শরনাপন্ন হন (যার নং- দে: ২২৪/২২ইং)। এ মামলায় বাদীপক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ চন্দ্র দাসসহ আরো ৬ জন স্বাক্ষর করেছেন। আর এতে বিবাদী করা হয়েছে ৯ জনকে। মূল বিবাদী করা হয়েছে ৮ জনকে তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অবৈধ কমিটির কথিত সভাপতি নীতিশ রঞ্জন রায়, কথিত সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র চৌধুরী, জেলা কমিটির কথিত সভাপতি সোমেশ রঞ্জন রায়, কথিত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব সাহা বাপ্পী, কথিত সহ-সভাপতি পরিমল রায়, মনোরঞ্জন দেব নাথ, তপন চৌধুরী, কথিত কোষাধ্যক্ষ রতন লাল দে। এছাড়া কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে.এ ভৌমিককে মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে।
পুজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক খোকন কান্তি আচার্য বলেন, আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসবীর শান্তি চাই,একজন ব্যাক্তির কাছে সংগঠন জিম্মি থাকবে তা হতে পারে না।আমরা জেলার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজনসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার পুজা পরিষদের নেতৃবৃন্দের নিয়ে একটি সুন্দর ও সফল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করতে চাই।
পুজা পরিষদের সদস্য বিদ্যৎ বৈদ্য বলেন, আমরা সংগঠনের স্বার্থে কাজ করছি।শুধুমাত্র একজন ব্যাক্তির কাছে জেলাবাসী জিম্মি থাববে তা হবে না, তার যে ভাবে খুশি এ ভাবে সংগঠন চালাবে এটা কি করে হয়। গঠনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে সংগঠন চলতে হবে আর আমরা তাই চাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এমরানুল ইসলাম বলেন- আমি সংগঠনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নেতৃবৃন্দকে। তিনি বলেন- যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি শক্ত হাতে দমন করা হবে। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এডভোকেট রঞ্জিত মালাকারের দায়েরকৃত মামলায় গত ১১ মে একটি আবেদন পর্যালোচনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সিনিয়র সহকারি জজ আদালত। এ সময় আদালত (আদেশ নং- ০৪, তারিখ- ১১.০৫.২২) বিবাদীপক্ষের আপত্তি দাখিল পর্যন্ত স্থিতাবস্থার আদেশ জারী থাকবে ঘোষণা দেন। একইভাবে জেলা-উপজেলা-পৌরসভা বা কোনো ইউনিটের সম্মেলন আয়োজন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

Daily Frontier News