মোঃ আব্দুল হান্নানঃ নাসিরনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতাঃ-
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে বন্যা ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।বন্যার পানির প্রবল স্রোতে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের চাঁনপাড়া ও গোর্কণ ইউনিয়নের কুকুরিয়া খালের উপর নির্মিত দুটি ব্রীজ ভেঙ্গে পড়ে গেছে।সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক গোর্কণ ইউনিয়নের কুকুরিয়া ব্রীজটি পরিদর্শন করেছেন।
বন্যার কারণে উপজেলার ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পানি পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া জানান,উপজেলায় প্রাথমিকের ১২৬টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টির চারপাশে পানি ও কিছু বিদ্যালয়ের ভিতরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।’
বন্যার কারনে নাসিরনগর সদর,ভলাকুট ও ফন্দাউক ইউনিয়নের তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।৫০ শয্যা বিশিষ্ট নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অভিজিৎ রায় জানান,বন্যা জরুরী চিকিৎসা সেবা দিতে ১৩ ইউনিয়নের জন্য ১৩ টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে।রবিবার সকাল ১১ ঘটিকার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ সংসদীয় ২৪৩ নাসিরনগর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বি,এম,ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম এ মেডিকেল টিমের শূভ উদ্ভোধন করেন।
এদিকে, নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।প্রায় ৩০ কিলোমিটার পাকা-আধপাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জনপদ। এরই মধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে উপজেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। সব মিলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে নাসিরনগরে মেঘনা,ধলেশ্বরী ও লঙ্গনের পানি বাড়ছে। এক সপ্তাহে মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। এতে উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আমনের ফসলি জমি, ১ হাজার পাট খেত ও মৌসুমি শাক-সবজি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে গোখাদ্য, বিশুদ্ধ পানি আর শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় প্রতি মুহূর্তেই পানি বাড়ার সাথে সাথে বাড়িঘর-রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত বন্যা দুর্গতের জন্য কোন ধরণের সহায়তাসহ শুকনো খাবার কিংবা ত্রাণ দেওয়ার বিষয়ে কোন আশ্বাস দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বন্যা দুর্গতরা
উপজেলার বুড়িশ্বর, গোয়ালনগর, ধরমন্ডল, গোকর্ণ, ভলাকুট, সদর ও চাপড়তলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ওই সব ইউনিয়নের নিচু এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। কিছু কিছু এলাকায় বাজারে পানি আসায় বন্ধ রয়েছে দোকানঘর। এরই মধ্যে উপজেলার বেশ কয়েকটি বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক মানুষ। বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর এসএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। তাদের অভিযোগ, এই পর্যন্ত সরকারিভাবে তেমন কোন সহায়তা আসেনি।
নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের বেরুইন গ্রামের সড়কে পানি উঠে যাওয়ার কারনে জনগনের চলাচল সহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দশ গ্রামের জনগণের।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজহারুল হক বলেন, আমার ইউনিয়নটি হাওরের মধ্যে। চারদিকে পানি আর পানি। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি না কমলে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। আমার এলাকার সকল স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ইতি মধ্যে বলা হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোনাব্বর হোসেন বলেন, আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় পরিদর্শনে যাচ্ছি। মানুষের পাশে আছি। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতার কোন কমতি নেই।
Copyright © 2025 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics