ফ্রন্টিয়ার.নিউজ ডেস্কঃ-
রাতের অন্ধকারে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে বাড়ির পিছন থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ মামলার আসামী হরেন্দ্র নাথ রায় (৩০) ৬ দিন পেরিয়েও গ্রেফতার না হওয়ায় ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিযুক্ত আসামীকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মটুকপুর সরকারপাড়ায় ০৯মে (সোমবার) ধর্ষনের ঘটনাটি ঘটেছে।
মেয়ের বাবা ডোমার থানায় ১১/০৫/২২ইং “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী/০৩ এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-০৫ । ধর্ষন মামলার অভিযুক্ত আসামী বোড়াগাড়ি বাজারের একজন ডিম চটপটির ব্যবসায়ী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাবা পেশায় একজন রিকশাচালক। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। মা ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করে। গত ৯ মে বিকালে মেয়েটির মা তার কর্মস্থলে যায়। ১১ বছর বয়সী নাবালিকা মেয়ে দাদা-দাদীর সাথে বাড়ীতে ছিল।
ওইদিন অনুমানিক রাত ৮ টায় মেয়েটি বাড়ী থেকে বের হওয়ার পিছনের টিনের দরজা লাগানোর জন্য গেলে সেখানে আগে হতেই অবস্থানরত প্রতিবেশী মৃত সুধীর চন্দ্র রায়ের পালিত ছেলে হরেন্দ্র নাথ রায় (৩০), অতর্কিতভাবে মেয়ের কাছে এসে তার মুখ চেপে ধরে বাড়ী সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে জনৈক সুদাসন এর বাঁশঝাড়ে নিয়া যায়।
সেখানে নাবালিকা মেয়েটিকে জোরপূর্বক মাটিতে শোয়াইয়ে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষন করে হরেন্দ্র নাথ রায়। মেয়েটি চিৎকার করার চেষ্টা করলে আসামী তাহার হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। ধ্বস্তাধস্তির একপর্যায়ে মূখ হতে আসামীর হাত সরিয়ে চিৎকার করতে থাকলে আসামী হরেন্দ্র মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পরে মেয়েটি পরিবারের লোকজনসহ সাক্ষী মোঃ দুলাল হোসেন (৬৫), মােছাঃ আমিনা বেগম (৫৮), মােঃ আনছার আলী (২৫) কে ঘটনার বিষয়ে বলে। এসময় মেয়েটি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মেয়ের বাবা সংবাদকর্মীকে জানান, মামলার পর গ্রাম পুলিশ দুলাল আমাকে বলে ঘটনাটা বেশী বাড়াবাড়ি না করে মিমাংসায় আসেন, আমরা আপনাকে টাকা নিয়ে দেবো। ধর্ষকের চাচাত ভাই মনোরঞ্জনও আমাদের হুমকি দিয়ে বলেন, তোমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেবো।
মেয়ের বাবা আরো বলেন, আমরা ধর্ষকের বিচার চেয়েছি এটা কি আমরা অপরাধ করে ফেলেছি? ঘটনার সাথে আরো যারা যারা জড়িত আমি সবাইকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
মেয়ের মা , চাচা ও চাচি জানান, অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে বাঁশঝাড়ের দিকে এগিয়ে গেলে ততক্ষনে আসামী নরেন পালিয়ে যায়। মেয়ের অবস্থা গুরুতর দেখে খুব দ্রুত ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক আবু সাঈদ দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। হাসপাতালে ৩দিন চিকিৎসার পর মেয়েটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে আমরা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জাকিয়া জেনী জানান, ধর্ষনের কিছুটা আলামত পাওয়া গিয়েছে।
আসামীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহন করার সময় আমাদের ইউপি সদস্য মিন্টু মেম্বার হুমকি দিয়ে বলেন, ব্যাপারটা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করেন না। তা নাহলে পরে তোমাদেরই সমস্যা হবে। গ্রামপুলিশ দুলাল বলেন, বেশী বাড়াবাড়ি না করে মিমাংসায় যান। আমরা ছেলে পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছি।
ধর্ষন মামলার অভিযুক্ত আসামী হরেনের স্ত্রী আলো (২০) বলেন, ধর্ষনের ব্যাপারে আমরা কিছু জানিনা। আমার স্বামী তাদের কাছে ধার বাবদ ৬০০ টাকা পেতো, সেই টাকা আনতে আমার স্বামী তাদের বাড়ি যায়। আমার স্বামী ৫-৬ দিন থেকে বাড়িতে নাই আর কোথায় গেছে আমরা সে ব্যাপারে কেউ জানিনা। ২ ছেলে নিয়ে আমাদের পরিবারের খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে, আমি আমার স্বামীর সন্ধান চাই।
হরেনের প্রতিবেশী মনোরঞ্জন রায় জানান, আমাদের ওয়ার্ডের মিন্টু মেম্বার ঘটনা ঘটার পর সেই রাতেই হরেন এর কাছে কিছু টাকা নিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করেছে।
মটুকপুর সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি ঈদের ছুটি চলাকালীন সময়ে ঘটেছে। স্কুল খুলে বাচ্চাটিকে ক্লাসে না পাওয়ায় আমরা খোঁজ নিয়ে ধর্ষনের ব্যাপারটি জানতে পারি। সে আমাদের স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী। আমরা শিক্ষকরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিন্টু তার বিরুদ্ধের অভিযোগসমূহকে ভিত্তিহীন মন্তব্য করে বলেন, মেয়ের চাচা ঢাকা থেকে মোবাইলে আমাকে দুর্ঘটনার সংবাদটি জানালে প্রথমে আমি অভিযুক্ত আসামী হরেনের বাড়িতে যাই। আমি তার কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে ঘটনা টি মিথ্যে। এরপর আমি ওই ধর্ষিত মেয়ের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের অবস্থা দেখে দ্রুত মেডিকেলে পাঠাই।
তিনি আরও বলেন, ঘটনা আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি ডোমার থানায় যোগাযোগ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ আসে, তাদের নিয়ে আবারো হরেনের বাড়িতে গিয়ে খোঁজাখুঁজির পর হরেনকে পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীরা একত্রিত হয়ে বলেন, ডোমার থানায় মামলা করার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আসামী হরেন সহ এর সাথে জড়িতদের আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সকলের বিচার চাই।
ঘটনার ব্যাপারে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলা রেকর্ডের পর থেকে আমরা আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আসামী আত্মগোপনে রয়েছে। আমরা গ্রেপ্তারের জন্য ডিজিটালি ও ম্যানুয়ালি চেষ্টা চালাচ্ছি।
Copyright © 2025 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics