মীর আমান মিয়া লুমান, ছাতক(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ছাতকে উপজেলার বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। ত্রাণের অপেক্ষায় চেয়ে আছেন বানভাসিরা। প্রতিদিন যাত্রীবাহী নৌকা দেখলেই ত্রাণ পাওয়ার আশায় ছুটে যাচ্ছেন সেখানে কিন্তু এখন পর্যন্ত বিতরণকৃত ত্রাণ চাহিদা তুলনায় কম হওয়ায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে বানভাসিদের। এতে বন্যাদুর্গত এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এভাবেই সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছে বানভাসি মানুষের। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে দাঁড়িয়ে থাকেন। বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় বানভাসি মানুষের কিছু মানুষ তকিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনদিন ধরে না খেয়েই আছেন তারা। তাদের খবর কেউ নেয়নি। উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাও ইউপির চাকলপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী আব্দুল মতিনের স্ত্রী বলেন, মেম্বর-চেয়ারম্যানরা কেউ আমার খোঁজ নেয় না। তাদের অনেকের ঘরে হাঁটুপানি। এসব এলাকার কর্মজীবী লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের হাতে কাজ নেই, ঘরে চাল নেই, পকেটে নেই টাকাও। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে দিনযাপন করছেন অর্ধাহারে-অনাহারে।
জানাযায়, রাতে ধীরে ধীরে পানি কমলে ও সকালে থেকে মুষলধারে বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্যার পানি আবার ও বাড়তে থাকে। সুরমা, চেলা ও ইছামতি পিয়াইন নদীর পানি বিভিন্ন স্থানে বিপদসীমার ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। পানির প্রবল শ্রেুাতের কারনে আতংকে রয়েছেন সুরমা নদীর তীরবর্তী পরিবারের মানুষ। সরকারিভাবে বানভাসি মানুষের মাঝে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়নি। তীব্র খাদ্য সংকটে এসব দুর্গত মানুষের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। সেই সঙ্গে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া কিংবা বন্যায় পানিতে আটকে পড়া মানুষ ত্রাণ পাচ্ছেন না।
উপজেলার বেরাজপুর, তাজপুর, তকিপুর, গোবিন্দগঞ্জ, নোয়াপাড়া, আলমপুর, কৃষ্ণনগর, আনন্দনগর, বাংলাবাজার, লাকেশ্বর, বাগইন, খিদুরা, দশঘর, খাগামুড়া, কাঠালপুর, গোয়াসপুর, রাউলী, জহিরপুর, মন্ডলপুর, ভাতগাঁও, ঝামক, লক্ষমসুম, কালেশ্বরী, খিদ্রাকাপন, কাইতকুনা, ছৈলা, শিবনগর, বিলপাড়, মোল্লাআতা, গোবিন্দগঞ্জ মড়েল, গোবিন্দনগর, আব্দুলজব্বার, তাজপুর, উজিরপুর, রামপুর, সিকন্দরপুর, মাধবপুর, চেচান, জাতুূয়াসহ ১শত৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে কোমড় পানি থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন, তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ পাচ্ছেন না। গবাদিপশু ও গোখাদ্য নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যার্তরা। অনেকে পানিতেই সারছেন প্রাকৃতিক কাজ। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকা নতুন করে বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে, যা অনেকে বলছেন ২০০৪ সালের বন্যা অতিক্রম করেছে। যোগাযোগ সড়কের অধিকাংশই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান বলেন, পানি বৃদ্ধির কারণে কিছু বোরো ধান ও শাক-সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, বন্যার বিষয় মনিটরিং এর জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন। সকালে উপজেলার ইসলামপুর ও নোয়ারাই বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। বর্তমানে ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি আরও ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।##
Copyright © 2023 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics