মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরোচীফ
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। জুলাই মাসের প্রথম তিনদিনে ১১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন একজন। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার (৩ জুলাই) সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গত মে মাসে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৩ জন। জুন মাসে আক্রান্তের এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮২ জনে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুও হয়েছে জুন মাসে। চলতি জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ১০ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এরমধ্যে জুনে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। তিনজন মারা যান জানুয়ারিতে। বাকি একজন মারা গেছেন গত ১ জুলাই।
বর্ষায় ডেঙ্গু থেকে বাঁচার ৭ উপায়
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত মহানগরীসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৫৭৯ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চ মাসে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ৫৩ জন এবং জুন মাসে ২৮২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। জুলাই মাসের প্রথম তিনদিনে শনাক্ত হয়েছে ১১৫ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার পর্যন্ত ৭৩ জন ডেঙ্গুরোগী চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৩৪ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন এবং অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে ৩৬ জন চিকিৎসাধীন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন এবং জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেন, আগের চেয়ে ডেঙ্গু কিছুটা বেড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক না হলেও ডেঙ্গুরোগী পাওয়া সাপেক্ষে সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু কর্নার চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।
ডেঙ্গু রোগীকে যেসব খাবার খাওয়ানো জরুরি
ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বর জরুরি। বিশেষ করে বাসায় মশারি ব্যবহার করা, বাচ্চাদের ফুলপ্যান্ট ও শার্ট পরিধান করেই স্কুলে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি বাসার আশেপাশের ফুলের টব, ডাবের খোল, চিপসের খালি প্যাকেট, গাড়ির নষ্ট টায়ার কিংবা অন্য যেকোন জায়গায় তিনদিনের বেশি পানি জমতে দেওয়া যাবে না। তাহলে এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে পারবে না। এতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এ চিকিৎসক বলেন, জ্বর হলেই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ট্যাবলেট কিনে খাওয়া মোটেই ঠিক নয়। এখন জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। তাছাড়া যখন তখন এন্টিবায়োটিক খাওয়া সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হঠাৎ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বলেন, ঈদের ছুটির কারণে বেশ কয়েকটি ল্যাব থেকে নিয়মিত ডেঙ্গু শনাক্তের তথ্য পাওয়া যায়নি। রোববার আগের মিচিং তথ্যসহ সবগুলো একত্রে দেওয়াতে ৫৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২৪ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। মূলত শহরেই বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক রোগী শহরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পরীক্ষার সময় গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করাতে উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে বলে দেখাচ্ছে। আবার কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য আসছে বলে জানান তিনি।
ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫০৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি
ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আরও বলেন, সীতাকুণ্ড এলাকায় ডেঙ্গুতে ১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন- এমন তথ্য পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের চারটি টিম সীতাকুণ্ডে গিয়ে মাত্র দুইজন রোগী শনাক্ত করেছেন। এজন্য যে কোনো তথ্য প্রচারের আগে সমাজে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি বলে মনে করেন এ চিকিৎসক।
Copyright © 2023 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics