Daily Frontier News
Daily Frontier News

শহীদে কারবালা ও মুসলিম জাহান (৩য় পর্ব)

 

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

 

সম্মানিত সাহাবায়ে কেরামগন কেন ইমামকে কুফা যাওয়া রুখতে চেয়েছিলেন ? হযরত ইমাম হোসাইন (রা:) যখন কুফাবাসীর পত্র পেয়ে কুফায় যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন অনেক সম্মানিত সাহাবী তাকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তারা কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন বলেই ইমাম হোসাইন রা: কে যেতে নিষেধ করেছিলেন।

ইয়াজিদ এই হত্যাকান্ডের সাথে কতটুকু জড়িত ছিল? মাত্র ৩৭ বৎসর বয়সে ইয়াজিদের মৃত্যু ঘটে। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার ৮ম খন্ডে তার একটা উক্তি দেখা যায়। তা হলো-মৃত্যু কালে সে প্রার্থনা করছে এই বলে যে, ‘‘হে আল্লাহ তুমি আমায় পাকড়াও করো না এই জন্যে যে যা আমি চাইনি এবং প্রতিরোধও করিনি। তুমি আমার ও ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের মধ্যে ফয়ছালা করো।’’ তার এই প্রার্থনায় সে নিজেই স্বীকার করেছে সে ঐ ঘটনার প্রতিরোধ করেনি। অথচ ইচ্ছা করলেই প্রতিরোধ করতে পারতো। এই হত্যাকান্ডে সে নিজের চাইতেও ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে বেশী দায়ী করেছে। কিন্তু সত্য তো এটাই যে, এই হত্যাকান্ড তার অমতে হয়নি। হত্যাকারীকে সে কোন সাজাও দেয়নি। প্রতিরোধও করেনি। ঘটনা ঘটতে দিয়েছে এবং পৃথিবীর নৃশংসতম হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েও হত্যাকারীর পক্ষাবলম্বন করেছে। কোন শাস্তি দেয়নি। রাস্ট্রপ্রধান হিসাবে এ হত্যাকান্ডের দায় তারই। এক্ষেত্রে তাকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার মত কোন কিছুই ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায় না।

ইয়াজিদকে সমর্থনকারীদের সাথে মুসলমানের সম্পর্ক: যারা নবীর দৌহিত্রের হত্যাকারী জালিম ইয়াজিদকে সমর্থণ করে, তাদের সাথে মুসলমানের একটাই সম্পর্ক, আর তা হলো তারা ইসলামের দুশমন। নবী পরিবারের দুশমন। মুসলমানরা একই সময় আলী ও তাঁর হত্যাকারীর অনুসারী এবং হোসাইন ও তাঁর হত্যাকারীর অনুসারী হতে পারে না; মুসলমানরা হয় আলীর সাথে নতুবা তার হত্যাকারীর সাথে অথবা হুসাইনের সাথে বা ইয়াযিদের সাথে। অনেকেই বলেন ইয়াজিদ তার কর্ম নিয়ে চলে গেছে তাকে খারাপ বলে কি লাভ? ফেরাউন, আবু লাহাব, আবু জেহেলও তো তাদের কর্ম নিয়ে চলে গেছে। ইসলামকে এবং নবীকে ভালবাসলে ঐসব দুরাচারী শয়তানদের ঘৃণা করতেই হবে। ভালকে যেমন ভাল বলতে হবে ঠিক তেমনি খারাপকে খারাপ বলাও ঈমানের দাবী।

পবিত্র সহি বুখারী হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, তিনি হাসান বিন আলীকে কাঁধে নিয়ে বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি। সুতরাং তুমিও তাঁকে ভালবাসো এবং যে তাঁকে ভালবাসে তুমি তাকেও ভালবাসো।
বুখারী শরীফের আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, এরা দুজন (হাসান ও হোসাইন) আমার দুনিয়ার দুটি ফুল।

তিরমিজী শরীফের আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ হাসান ও হোসাইন জান্নাতবাসী যুবকদের সরদার হবেন। নবীজীর এই কলিজার টুকরাকে হত্যাকারী ইয়াজিদকে কোন মুসলমান সমর্থণ করতে পারে না। ইয়াজিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অটুট রাখতে ইয়াজিদের নিদের্শে তার পাপিষ্ঠ সেনারা ইমাম হুসাইনকে হত্যা করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মোহ এমন জিনিস, ইয়াজিদ মুয়াবিয়া (রাঃ)’ র মত সাহাবার সন্তান হওয়া সত্বেও নবীজীর কলিজার টুকরা দৌহিত্রকে হত্যা করতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। তারা যুগে যুগে তাদের রচিত তথাকথিত সঠিক ইতিহাস মানুষকে শেখাবার ও হজম করাবার নানা চেষ্টা করেছেন। ইমাম হোসাইনের গুনগান গেয়ে কৌশলে ইয়াজিদের পক্ষে বহু বইপুস্তক লিখেছেন। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে মুসলমানেরা বিভ্রান্ত হননি। যুগে যুগে তাদের শত সহস্র প্রচেষ্টা সত্বেও নবীর দৌহিত্রের হত্যা (শহীদ)কারীকে কেউ মেনে নেননি।

হোসাইন (রাঃ)-কে কেন ইমাম বলা হয়?
পুরো মুসলিম বিশ্ব এক কথায় তাকে ইমাম বা নেতা মেনে নিয়েছেন। ইয়াজিদ জনতার উপর চেপে বসেছিল। ইয়াজিদ মুসলিম বিশ্বের নির্বাচিত নেতা ছিল না। সেই সময় থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা ইয়াজিদকে ইমাম বা নেতা হিসাবে মেনে নেয়নি নেবেও না। ইমাম হোসাইনকে ইমাম বলার অর্থ ইয়াজিদকে স্বীকার না করা। সেকারনে তখন থেকেই যুগে যুগে ইমাম হোসাইন-এর নাম নেয়ার আগে ‘ইমাম’ বলা হয়। ইমাম হাসানকেও বিষ প্রয়োগে অত্যন্ত কৌশলে হত্যা করা হয়েছিল। তিনিও মুসলিম জাতির ইমাম। ইয়াজিদের বংশধরদের যতই গা জ্বলুক, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা হাসান এবং হোসাইনকে ‘ইমাম’ হিসাবেই ঘোষনা দেবেন। আর অন্যদিকে নৃশংসতার প্রতীক ইয়াজিদের নামে আজ পর্যন্ত কোন মুসলমান সন্তানের নাম রাখা হয়নি, কেয়ামত পর্যন্ত হবেও না। যদিও মুসলিম নামধারী শীর্ষ দেশগুলোতে এজিদী শাসন এখনো বলবৎ রয়েছে।

মুসলিম বিশ্বে কারবালার ঘটনার প্রভাব:
কারবালার ঘটনা ইসলামী সমাজে এত অধিক গুরুত্ব পেয়েছে যে কারনে, তা হলো মুসলমান মাত্রই জালিমের রিরুদ্ধে, ইসলামী খিলাফতের পক্ষে। কারবালার এ ঘটনা মুসলমানদের জেগে উঠার প্রেরণা যোগায় বলে এ যুগের নব্য জালিম শাসকেরা বড়ই বিচলিত। এ কথা ঠিক যে, কারো মৃত্যুর জন্য মাতম করার রীতি ইসলাম সমর্থণ করে না। এটা বিদআত। অনেকেই না জেনে সেটা করেন। শিয়া নামধারী কিছূ লোকজন এই সব করেন বলেই ইয়াজিদের সমর্থকদের পোয়াবারো হয়। তারা উছিলা পেয়ে যায় কারবালার ঘটনাকে শিরক বিদআত বলার। কিন্তু সে কারনে কারবালার ইতিহাস মলিন হওয়ার নয়। ইসলামের ইতিহাসে অনেক দুঃখজনক হত্যাকান্ড ঘটেছে, কিন্তু কারবালার ঘটনা এতই নৃশংস যে মানুষের হৃদয়কে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। তার শাহাদাত এমন এক অসাধারণ ও অদ্বিতীয় শাহাদাত এবং এমন এক হৃদয় বিদারক ঘটনা, আগের এবং পরের যুগে যার কোন নজীর নেই। এত দীর্ঘস্থায়ী ও এত ব্যাপক শোক, কান্না ও আহাজারি মুসলিম জাতি আর কোন শাহাদাতের জন্য করেনি। মুসলমানদের এই শোক, এই কান্না এই প্রতিবাদ মুসলিম বিশ্বের উপর চেপে বসা নব্য ইয়াজিদদের হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। তা নইলে ইয়াজিদের পক্ষে তারা ইতিহাস বিকৃতিতে এমন মরিয়া হয়ে উঠছে কেন? কেন মহানবীর কলিজার টুকরা ইমাম হোসাইন(রা:)কে হকের পক্ষে ছিলেন না বলে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে মানুষকে তা হজম করাবার অপচেষ্টায় লিপ্ত ? কারবালার ঘটনাকে মানুষ কেন এতো গুরুত্ব

Daily Frontier News