Daily Frontier News
Daily Frontier News

রোজা থেকে কি শিক্ষা পেলাম আমরা

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।

 

সিয়াম সাধনার মাস- মাহে রমজান। দীর্ঘ একমাস রোজা উপলক্ষে সাহরি, ইফতার, তারাবি, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দোয়া, দরুদ শরীফ পাঠ,নফল ইবাদত – বন্দেগীর মধ্যদিয়ে অতিবাহিত করেছি আমরা।

কিন্তু অনেক সময়ই মাহে রমজান আসে আর চলে যায়, রোজার আগে যেখানে ছিলাম পরেও সেখানেই থেকে যাই। সাধনার সময়-সুযোগ আর হয়ে ওঠে না।ডিজিটাল যুগের মানুষ হিসেবে আমাদের ব্যস্ততাও ডিজিটাল। কাজকর্মের ব্যস্ততায় সাধনার সময়-সুযোগ কোনোটাই হয় না।

তাই চলার পথে কাজের ফাঁকে সব কিছুর মধ্যেই যেভাবে সিয়াম আদায় করি, সেভাবে সাধনাও করতে হবে। আলাদাভাবে সময় বের করার চিন্তায় বসে থাকলে সময় শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু কাজের সুযোগ হবে না কখনও। তাই আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) জীবন-জীবিকা ও মানব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব কাজের সুন্দর পথ বলে দিয়েছেন এবং চলার পথে পদে পদে সাধনার শিক্ষা দিয়েছেন।

মাহে রমজান বিশেষভাবে সবর ও সহমর্মিতার মাস। হযরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত- নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান সবরের মাস আর সবরের প্রতিদান জান্নাত। ’ –বায়হাকি

হাদিসের ভাষ্যমতে, সবরের প্রতিদান জান্নাত। আমাদের সমাজে সবরের বিশেষ এক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। সীমিত এবং কেবলই ধর্মীয় কাজের সঙ্গে তাকে যুক্ত করা হয়। তা কেবল ধর্মীয় কাজের সঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যাবতীয় কাজের সঙ্গেই তার সম্পর্ক। বাস্তব জীবনের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে রমজান সবর ও সহমর্মিতার মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ধনাঢ্য ব্যক্তিও অভাবীদের ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করে তাদের প্রতি সহমর্মী হওয়ার দীক্ষা পায়। তাই রমজান সহমর্মিতার মাস। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের জীবনের সব কাজে সবরের শিক্ষা দিতে চান। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। ’ –সূরা আল বাকারা: ১৫৪

জীবনের যে কোনো কাজে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কঠিন বাস্তবতা রয়েছে, যেখানে সবর এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই প্রয়োজন। আর কঠিন কঠিন অনেক সমস্যার সমাধান হচ্ছে ধৈর্য ও সবর। সবর না থাকার কারণে একজন মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রোজা রেখে বেলা শেষে সঙ্গতকারণেই মানুষের মেজাজ খারাপ হতে পারে, তুচ্ছ কারণে কারও প্রতি মেজাজ বিগড়েও যেতে পারে। ছোটখাট কারণে ঝগড়ার সৃষ্টি হতে পারে। সেই নাজুক মুহূর্তে নবী করীম (সা.) আমাদের জীবনে শিক্ষা দিয়েছেন উত্তম আদর্শ, শিক্ষা দিয়েছেন সবরের। কাজ ছোট, তবে কঠিন। তাই ছোট কাজের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন বিশাল প্রতিদানের সুসংবাদবাণী। যাতে এই ছোট ও কঠিন কাজের প্রতি আমরা যত্নবান হই।

রাসূল (সা.) বলেছেন, সবরের প্রতিদান সরাসরি জান্নাত। অনেক সময় কারণে-অকারণে আমাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, মেজাজ খারাপ হয়ে যায়; রোজা রেখে যেন ধৈর্যের বাঁধ না ভাঙে সে জন্য নবী করীম (সা.) আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের মধ্যে কেউ রোজাদার হলে সে যেন অশ্লীল গালাগাল এবং বেহুদা ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকে; যদি কেউ তাকে গাল দেয় বা তার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তবে সে যেন সবর করে বলে আমি রোজাদার।

রমজানে সিয়াম সাধনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সবর ও সহমর্মিতা। মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা, সংযম যেন আমাদের বরকত বয়ে আনে এবং তার শিক্ষা আমাদের বাকি জীবনকে সুন্দর করে,আলোকিত করে এই চেষ্টা আমাদের মাঝে থাকতে হবে।আর তা হলেই না আমরা সফলকাম হব- ইনশাল্লাহ।

Daily Frontier News