Daily Frontier News
Daily Frontier News

পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও শহীদে কারবালা

 

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

 

আরবি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস ‘মহররম’। মহররম মাসের দশম দিনকে বলা হয় ‘আশুরা’। আরবি ‘আশারা’ হচ্ছে দশ। সেই ‘আশারা’ থেকেই এসেছে ‘আশুরা’ তথা মহররম মাসের দশ তারিখ। পৃথিবীতে মহরমের দশ তারিখে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি ঘটেছে। যে কারণে এই তারিখটি ইহুদি, নাসারা, মুসলিম সকলের কাছেই সম্মানিত।কোরআন-হাদিসের আলোকে আশুরা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

ইসলামে আশুরার গুরুত্ব:

আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন। সেই চার মাসের একটি হলো মহররম।
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন।” (সুরা: আত তাওবাহ, আয়াত: ৩৬)
উপর্যুক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘তিনটি মাস ধারাবাহিক; আর তাহলো জিলকদ, জিলহজ এবং মহররম। আর অপরটি হলো রজব। যা জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি)
সুতরাং কোরআন- হাদিসের আলোকে মহররম মাসকে একটি সম্মানিত মাস বলা হয়েছে। আর মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরার দিন বলা হয়েছে। আশুরার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম।

মহররম মাসের ফজিলত:

পবিত্র হাদিস থেকে জানা যায় মহররম এবং আশুরার দিনে ইবাদত বন্দেগি করার অপরিসীম ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রমজান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হল মহররম মাসের সাওম (আশুরার সাওম) এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাত্রের সালাত।” (সুনানে আন-নাসায়ী ১৬১৩, ইবনু মা-জাহ ১৭৪২)
আবূ কাতাদাহ আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফা দিনে সওম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন-এর দ্বারা বিগত ও আগত এক বছরের গোনাহ (পাপ) মোচন হয়। “আশুরার দিনের সওম পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন-বিগত এক বছরের পাপ মোচন হয়।” (বুলুগুল মারাম ৬৮০, মুসলিম ১১৬২, তিরমিযী ৬৭৬, নাসায়ী ২৩৮২, আবু দাউদ ২৪২৫, ইবনু মাজাহ ১৭১৩, আহমাদ ২২০২৪)
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- “রমজান মাসের সাওমের পরে আল্লাহ্‌ তা’য়ালার মাস মহররমের সাওমই সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ।” (তিরমিজি ৭৪০) উপর্যুক্ত হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, মাহে রমজানের পরে মহররম মাস এবং এই মাসে পালন কৃত সাওমের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা এই মাসের সাওমের বিনিময়ে আল্লাহ পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন। আর মহররম মাসের দশম দিন তথা আশুরা হচ্ছে ফজিলতপূর্ণ দিন। যেদিনে সাওম পালনের কথা হাদিসে এসেছে।

আশুরা এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আমরা ইসলামের ইতিহাস, হাদিস পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে আশুরার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি। যেগুলো আল্লাহর প্রেরিত বিভিন্ন নবী রাসুলের সাথে সম্পর্কিত। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম পর্যন্ত অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে এই আশুরা। যে কারণে এই দিনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা বুখারি ৩৩৯৭, ও মুসলিম ১১৩৯ নং হাদিস থেকে এই দিনে ঘটিত দুটি ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট জানতে পারি। যার একটি হলো ফেরাউনের নির্যাতনের কবল থেকে- হযরত মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের মুক্তি। যখন আল্লাহ সাগরে রাস্তা সৃষ্টি করে তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
অন্যটি হলো ফেরাউনের মৃত্যু। যখন আল্লাহ কতৃক সাগরের রাস্তা দিয়ে মুসা (আ.) ও তাঁর সাথীরা চলে যাচ্ছিলেন, তখন ফেরাউনও তার সৈন্যদল নিয়ে সেই রাস্তা দিয়ে তাদের ধরতে যাচ্ছিল। কিন্তু মাঝ পথে রাস্তা পানিতে একাকার হয়ে ফেরাউনের মৃত্যু হয়।
এইসব কাহিনি সুদীর্ঘকাল থেকে আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে। সুন্নি বিশ্বকোষ ওয়েবসাইটসহ উপমহাদেশের অসংখ্য আলেম ওলামাদের বর্নণায় অসংখ্য কাহিনি রয়েছে। যেমন-

*মহান আল্লাহ এই দিনে প্রথম মানব আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেন এবং জান্নাতে স্থান দেন। পরবর্তীতে এই দিনেই আদম-হাওয়া (আ.) কে দুনিয়ায় পাঠানো হয়। একই সাথে এই দিনেই তাঁরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেন।

*মহান আল্লাহ পাক এই মহররমের ১০ তারিখে সৃষ্টির সূচনা করেন।

*এই দিনে হযরত নূহ (আ.) এবং তাঁর সাথীরা বন্যা-প্লাবন থেকে মুক্তি পান।

*আশুরার দিন শুক্রবার ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।

*এ দিনই হুযূর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র ওজুদ (সৃষ্টি) মুবারক হয় এবং ইছমত, সম্মান ও খুছূছিয়ত এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।

*এই দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালামের দোয়া কবুল করা হয়।

*এই দিনে হযরত ইদ্রিস (আ.) কে সম্মানিত স্থানে তথা আকাশে তুলে নেয়া হয়।

*আল্লাহ পাক এদিনে হযরত মূসা (আ.) এর সাথে কথা বলেন এবং তাঁর উপর তাওরাত শরীফ নাযিল করেন।
*মহররমের দশ তারিখ হযরত ইউনুস (আ.) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকার পর মুক্তি লাভ করেন।

*এই দিনে হযরত মরিয়ম (আ.) এর গর্ভ হতে হযরত ইসা (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন।

*হযরত আইয়ুব (আ.) দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সুস্থতা লাভ করেন।

*এদিনে দীর্ঘ দিন বিচ্ছেদের পর হযরত ইউসূফ (আ.) তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.) এর সাথে মিলিত হন।
*আল্লাহ পাক এ দিনে হযরত ইসা (আ.) কে আসমানে তুলে নেন।

*এদিনে হযরত ইবরাহীম (আ.) খলীল উপাধি লাভ এবং নমরূদের অগ্নিকুন্ড থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন।

*এ দিনে হযরত দাউদ (আ.) এর দোয়া কবুল এবং তাঁর পুত্র হযরত সুলায়মান (আ.) কে বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব দেওয়া হয়।

Daily Frontier News