Daily Frontier News
Daily Frontier News

গভীর শোকাবহ সেই ১৫ ই আগষ্ট

 

 

 

মোঃ আব্দুল হান্নানঃ-

 

শোকাবহ ১৫ ই আগষ্ট।আগস্ট শোকের মাস। নির্মমতার এক কালো অধ্যায়। ১৫ই আগষ্টের দিন শুধু বঙ্গবন্ধুই নয় ঘাতকের বুলেট আঘাত এনেছিলো বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে।

পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত।বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি,তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলও।

সবাইকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। দেশের বাইরে অবস্থান করার কারনে সেদিন প্রানে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। নানা লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে স্বাধীন করে বঙ্গবন্ধু যখন এদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে বিশ্ব দরবারে দাড় করানোর সংগ্রামে নিয়োজিত ছিলেন, ঠিক তখনই দেশি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পুরো বাঙ্গালী জাতির বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র।

ওই দিন ঘাতকেরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাকে শুধু স্ব-পরিবারে হত্যাই করে না হত্যা করেছিলো বাঙালির চেতনা, অগ্রযাত্রা, সমৃদ্ধি ও সুন্দর অগামীর স্বপ্নকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এদেশকে স্বাধীন করে যে সোনার বাংলা গড়তে আত্মনিয়োগ করেছিলো ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেট বাঙালির সেই অগ্রযাত্রাকে থমকে দেয়। শত শত বছরের একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে বিশ্ব দরবারে যিনি বাঙালিদের একটি বীরের জাতি হিসাবে পরিচিত করালো, মাত্র চার বছরের মধ্যে দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে ঘাতকেরা সেই জাতির জনককে স্ব-পরিবারে হত্যা করে সেই বাঙালি জাতিকে পরিয়ে দেয় কলংকের তিলক।

ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি, হত্যার বিচার যাতে না হয় সেজন্য ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম সহযোগী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমান ঘৃন্য ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলো। যা বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতিকে আরেকবার হেয় প্রতিপন্ন করে।

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৫ আগস্টের এই কালো দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পলান করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর জাতি হিসাবে আমরা যে কলংকের বোঝা বহন করেছি,জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে বিচারের মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করায় আমরা কিছুটা হলেও কলংকমুক্ত হই।

খুনিদের অনেকেই যারা এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে তাদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলমান আছে।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠার মাত্র ৩ বছর ৭ মাসের মধ্যেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত ঠিক সেই মুহূর্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কালরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতির হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় অনেক অশ্রু, ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি ফিরে পায় ‘ভাত ও ভোটের অধিকার’।

আজ বঙ্গবন্ধু-কন্যা,সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সেদিন হত্যাকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে সক্ষম হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে হত্যা করতে পারেনি। হত্যা করতে পারে নাই বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নকে। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলো তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ সেই লক্ষ্যের দিকেই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দরিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মান করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা ইতোমধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রকে জয় করে দেশকে দিন দিন উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। শেখ হাসিনা নানা প্রতিকুলতার সম্মুখীন হয়েও সেই ঘৃন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখিন করেছে। একসময় যেটাকে ভাবা হতো অলীক স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের লালনকারী শেখ হাসিনা আজ সেটার বাস্তবায়নের অগ্রদুত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো দেশকে মাথা উচু করে দাড় করানো।

আজ বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি রেখে গেছেন তার আদর্শ, চেতনা আর রক্তের উত্তাধিকার শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে সেই স্বপ্নময় ভবিষ্যতের দিকে আগামীর বাংলাদেশ।
জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।

Daily Frontier News