Daily Frontier News
Daily Frontier News

নবীনগর থানার যুদ্ধ কালীন সময়ে থানা কমান্ডার মরহুম আঃ মজিদ সাহেবের ২১ তম মৃত্যু বার্ষিকী।

 

মাসুম মির্জা নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) 

 

ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা,নবীনগর উপজেলা, বিটঘর ইউনিয়ন, মহেশপুর গ্রামের আব্দুল_মজিদ সুবেদার ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত সাহসী,সৎ ও নিষ্ঠাবান।
তিনি মহেশপুর গ্রামের মোল্লাবাড়ীর কৃতিসন্তান। পিতা -হাজী আফাজ উদ্দিন মোল্লা।আমাদের নবীনগরের অন্যতম ব্যক্তিদের মধ্যে এই কৃতিমান ব্যক্তিটিও একজন। কর্মজিবনের প্রথমে বৃটিশ আর্মি ও পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকুরি করেন।তিনি তৎকালিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সু-দক্ষ সার্জেন্ট ছিলেন।তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে থেকে বৃটিশ যুদ্ধেও অংশগ্রহন করেছিলেন এবং সেই যুদ্ধেও অনেক সাহসীকতার সুনাম অর্জন করেছিলেন।
তারপর শুরু হয় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম,২৫শে মার্চের পাক-হানাদার বাহিনীর বর্বরতা দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি।তিনি তখন ছিলেন পাক-বাহিনীর টকবগে তাজা এক সাহসী তরুন এবং এই দক্ষ সার্জেন্ট একদিন সুযোগ বুঝে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকেই পাক বাহিনির উপর আগ্নেয়াস্ত দ্বারা বিদ্রোহ করেন এবং পাক বাহিনীর উপর গুলি বর্ষন করে বেশ সংখক পাকিস্তানী সৈন্যদল হত্যা করে অস্ত্র,গোলাবারুদ নিয়ে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশ তথা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেঃএম এ জি উসমানীর নিকট।পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের ৩নং সেক্টর কমান্ডার এম কে সফিউল্লাহ্ এক লিখিত আদেশে এম আব্দুল মজিদকে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের ঘোষনা করেন।
তিনি নবীনগর থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দ্বায়ীত্ব পেয়ে হানাদার বাহিনীর উপর একের পর এক আক্রমন চালিয়ে দুঃসাহসী প্রতিটি গেরিলা অভিযান পরিচালনা করে পাকবাহিনীকে ঘায়েল করে ফেলেন।
তারপর অত্র নবীনগর এলাকার বহু রাজাকার,আলবদর,শামস,গুপ্তচরকে খুঁজে বের করেন এবং তাদেরকেও হত্যা করেন।এই দ্হ্ম কমান্ডারের সাহসীকতা,বুদ্ধিমত্তার চৌকস রনকৌশলের কাছে অবশেষে ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে পাকবাহিনী আত্মসমর্পন করে এবং ১৪ ডিসেম্বর থেকে নবীনগর থানাকে হানাদার মুক্ত ঘোষনা দেওয়া হয়!
১৯৭১ সালে নবীনগর থানার প্রথম মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হয়ে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তাকে ১৯৯৯ সালে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বর্ণ পদকে ভূষিত করেন।

থেমে নেই তিনি ,দেশের তরে আকূল যার প্রান সে কি আর থেমে থাকতে পারে।
তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পূনরায় যোগ দেন বাংলাদেশ রক্ষি বাহিনীতে।তিনি ছিলেন রক্ষি বাহিনীর ডেপুটি লিডার।এতোঃপর ১৯৭৫ সালে দেশে নবগঠিত অার্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে আসেন।তারপর ১৯৮০ সালে পুলিশ ইন্সপেক্টর পদমর্যাদা প্রাপ্ত হয়ে চলে আসেন ঢাকা বিভাগ পুলিশে।সেখান থেকে ১৯৮৪ সালে মুন্সিগঞ্জে প্রথম আর আই হিসাবে যোগদান করেন।সবশেষে ১৯৮৭ সালে নীজ জেলা ব্রাহ্মনবাড়ীয়া থেকে কর্মজিবনের ইতি টানেন!এই মানুষটি অত্র এলাকা জুড়ে বহু মানুষকে সরকারী,বেসরকারি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন।সামাজিক জিবনেও তিনি অত্যন্ত পরোপকারি ও সমাজসেবক ছিলেন!

নবীনগর থানার প্রথম বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তিনি -২০০১ সালের ৩১ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন।

বড় ছেলে-সেনাবাহিনীর অবঃক্যাপ্টেন,
মেজু ছেলে-পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর এবং
ছোট ছেলে-নৌবাহিনীর পেটি অফিসার।

সম্প্রতি ২১শে বই মেলায় প্রকাশিত “৭১ এর রক্তক্ষরণ” বইয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মজিদ সাহেবের ব্যাপারে বিস্তারীত তথ্য দেয়া আছে।

আজকের এই দিনে নবীনগর থানার প্রথম বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ মজিদ(সুবেদার) এর জন্য সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী।মহান আল্লাহ পাক যেন জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।

Daily Frontier News