Daily Frontier News
Daily Frontier News

হজ্বের পর করণীয়

 

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।

 

হজ শেষ হলো মাত্র, তার কাযাদি পূর্ণ হল, আর হজের মাস তার কল্যাণ ও বরকত নিয়ে চলে গেল ।যাদের হজ কবুল হয়েছে তারা তাদের গুনাহগুলো মাফ করে নিয়ে এমন দিনের মতো প্রত্যাবর্তন করলো যেমন তাদের মায়েরা তাদের জন্ম দিয়েছিল। সুতরাং যারা সফল হয়েছেন তাদের মোবারকবাদ। আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের পক্ষ থেকেই কবুল করে থাকেন। (সূরা আল মায়েদা :২৭)

নেক আমল কবুল হওয়ার কিছু চিহ্ন ও কিছু নির্দেশন রয়েছে । এর অন্যতম চিহ্ন হচ্ছে সে আমলের পর আবার আমল করতে সমর্থ হওয়া, পক্ষান্তরে সে আমল প্রত্যাখ্যাত হওয়ার চিহ্ন, হচ্ছে, সে আমল করার পর খারাপ কাজ করা। সুতরাং যখন হাজী সাহেব হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং তার নিজকে দেখতে পাবেন তিনি আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের প্রতি অগ্রণী, কল্যাণের প্রতি অনুরাগী, দ্বীনের প্রতি দৃঢ় ,অপরাধ ও গুনাহ থেকে দূরে অবস্থানকারী, তখন সে যেন বুঝে নেয় যে, আল্লাহ চায় এটি আল্লাহ তায়ালার কাছে তার আমল কবুল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত।
আর যদি নিজেকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে পিছপা দেখতে পায়, কল্যাণের কাজ থেকে বিমুখ, অপরাধের প্রতি প্রত্যাবর্তনকারী ও গুনাহের কাজে অগ্রণী, তবে সে যেন বুঝে নেয় যে, এসব কিছু সঠিকভাবে করার জন্য নিজেকে নিয়ে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।

আপনি সম্মানিত দিনগুলো অতিবাহিত করেছেন আর পবিত্র স্থানগুলোতে অবস্থান করেছেন, সুতরাং আপনার এ কাজ যেন হেদায়েতের পথ ও হকের রাস্তায় চলার নতুন মোড় সৃষ্টি করে।
হে আল্লাহর আহব্বানে সাড়া দানকারী, আপনি হজের আহবানে সাড়া দিয়ে তালবিয়া পাঠ করেছেন এবং ডেকেছেন লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। সুতরাং সর্বদা প্রতিটি কাজে আল্লাহর জন্য হাজির থাকতে সচেষ্ট থাকুন । তার আনুগত্যে সর্বদা র থাকুন; কেননা, যিনি হজের মাসের রব, তিনি অন্য মাসেরও রব, আর আমরা আমৃত্যু আল্লাহর কাছে সাহায্য ও একমাত্র তারই ইবাদত করতে নির্দেশিত হয়েছি।আর আপনার রবের ইবাদত করুন, যতক্ষণ না আপনার কাছে মৃত্যু আসবে।( সূরা আল আল হিজর: ৯৯)।

কল্যাণের মৌসুম এ রকম কোন স্টেশনের নাম নয় যেমনটি কোন কোন মানুষ মনে করে থাকে- যেখানে কোন মানুষ তার ভার লাঘব করবে, তার গুনাহ থেকে পরিত্রাণ নেবে, তারপর সেখান থেকে ফিরে গিয়ে আবার অন্য কোন বোঝা নতুন করে বহন করবে। এটি নিঃসন্দেহে ভুল বুঝা। যারা এ ধরনের কিছু বুঝে তারা অবশ্যই এ মৌসুমগুলোর বাস্তবতা উপলব্ধি করতে ভুল করেছে। বরং এ মৌসুমগুলো গাফেলদের সাবধান করার সুযোগ ও ত্রুটি -বিচ্যুতিকারীদের জন্য উপদেশ; যাতে তারা তাদের গুনাহগুলো থেকে বিরত হয়ে তাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়, ভবিষ্যতে সেগুলো পরিত্যাগ করার উপর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়- আর নিশ্চয় যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎ কাজ করে তারপর হেদায়েত গ্রহণ করে আমি তাদের জন্য অধিক ক্ষমাশীল ্। (সূরা ত্বহা:৮২)।

অনেক সময় দেখা যায় ,মানুষ তাদের নফসের প্রবঞ্জনা ও শয়তানের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পড়ে থাকে; এমনকি শেষ পর্যন্ত এ অবস্থাতে তাদের মৃত্যু হয়। সুতরাং হে আল্লাহর ঘরের হজকারী! আপনি তার মত হবেন না, যে মজবুত প্রসাদ নির্মাণ করে সেটার ভিত্তিমূলে আঘাত করে। তার মত যে ,তার সুতা মজবুত করে পাকানোর পর সেটার পাক খুলে নষ্ট করে দেয়। (সূরা আন নাহল: ৯২)।

কিছু মারাত্মক বিষয় রয়েছে যার জন্য প্রতিটি মুসলিমের সাবধান হওয়া জরুরী ,যেমন কিছু মুসলিম আল্লাহর সম্মানিত ঘরের হজ করে থাকে, অথচ সে তার চেয়েও বড় বস্তু পরিত্যাগ করে থাকে। তাদের মধ্যে কেউ ফরজ সালাতই আদায় করে না। নিঃসন্দেহে তার হজ হয় না। কারণ সে সালাত পরিত্যাগকারী। আর সালাত পরিত্যাগকারী সম্পর্কে কঠোর সাবধানবাণী ও ধমক এসেছে, মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের কিসে সাকার ( জাহান্নামের) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।( সূরা আল মুদ্দাসসির:৪২-৪৩)।

প্রিয় নবী সা: বলেন, নিশ্চয় একজন লোক এবং শিরক ও কুফরির মধ্যে সালাত পরিত্যাগ করাই মাপকাঠি । ইমাম মুসলিম জাবের রা: থেকে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে । (মুসলিম:৮৮)।

অনেকে আল্লাহর সম্মানিত ঘরের হজ করেছেন কিন্তু যাকাত দেন না; অথচ মহান আল্লাহর কিতাবে যাকাতকে সালাতের সঙ্গে একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে- আর তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান করা।( সূরা আল বাকারার:৪৩)।

কেউ হয়তো হজ করে এসেছেন কিন্তু রমজানের রোজা রাখেন না, অথচ রোজা হজের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ; রোজা হজের আগে ফরজ হয়েছে। এসব লোক যারা হজ আদায় করে ইসলামের অন্যান্য রুকন নিয়ে অবহেলা করে- তারা যেন এমন শরীরের অঙ্গ নিয়ে ব্যস্ত থাকে যার মাথার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন । একজন মুসলিমের পর অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে, সে তার দ্বীনের হেফাজত করবে, পূর্ণতার দিকে লক্ষ্য রাখবে, দ্বীনের কোন অংশ ছুটে যাওয়া কিংবা বাদ পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে যত্নবান হবে। সুতরাং সে যাবতীয় ওয়াজিব আদায় করবে , নিষেধকৃত বিষয়াদি পরিত্যাগ করবে, আমৃত্যু আল্লাহর দ্বীনের উপর অবিচল ও দৃঢ় থাকবে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যারা বলে ,আমাদের রব আল্লাহ, তারপর অবিচলিত থাকে ,তাদের কাছে নাযিল হয় ফেরেশতা (এ বলে) যে, তোমরা ভীত হয়ো না ,চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। সূরা ফুসসিলাত: ৩০)।

আর হজের পর যে বিষয়টি বেশি গুরুত্বের দাবিদার , তা হচ্ছে একজন মুসলিম তার নিজের বিষয়টি বারবার দেখবে, আত্মসমালোচনা করবে, পূর্বের কৃত আমলের ব্যাপারে নিজের হিসাব নিজে গ্রহণ করবে, তারপর নিজের জন্য এমন এক প্রোগ্রাম স্থাপন করবে যা সে প্রতিপালন করতে পারে, যাতে করে সে হজের মাধ্যমে যে ঘরটি বানিয়েছে তা পূর্ণ রূপ দিতে পারে।
এসব কিছু এ জন্যই যে, বান্দা হজের ফরজ আদায় করার পর এবং আল্লাহর তৌফিক লাভের মধ্যদিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলো যথাযথ ভাবে আদায় করতে সচেষ্ট ও অবিচল থাকার আমৃত্যু চেষ্টা করা। আমিন।।

Daily Frontier News