শ্রী ঃ মিশুক চন্দ্র ভুঁইয়া, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় সেই মাদ্রাসা ছাত্রী মোসাঃ নুসরাত জাহান মিম (১৭) নামে এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া গেছে রহস্য।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে নুসরাত জাহান মিমের মৃত্যুর আগের দিন রোববার (৩০ নভেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে বাউফল উপজেলার কালাইয়া বাজার মন্দির রোড অবস্থিত আঃ রব ডিজিটাল স্টুডিও ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে মিম তার মোবাইল সার্ভিসিং করার জন্য যান। সেখানে মিম মোবাইল সার্ভিসিং করতে দোকানের মালিক আঃ রব এর কাছে দেন। এর ফাঁকে মিম ছবি তোলার রুমে যান এবং কিছুক্ষন পরে মিম ছবি তোলার রুম থেকে বের হয়ে দোকানের সামনে আসা মাত্রই দোকানের মালিক আঃ রব ছবি তোলার রুমে ঢুকে অন্য একজনের এন্ড্রুয়েড মোবাইল সার্ভিসিং করতে দিয়ে যাওয়া মোবাইল চার্জে দেওয়া ছিল তা না দেখেই মিমকে সন্দেহ করে এবং মিমকে আঃ রব বারবার বলে আপনিই মোবাইল নিয়েছেন। এদিকে মিম বারবার না স্বীকার করলে হঠাৎ দোকানের আশপাশের লোকজন ও কিস্তি নিতে আসা এনজিও এক মহিলার দ্বারা মিমকে রুমে ঢুকিয়ে তল্লাশি চালিয়ে মিমের মাথায় স্কাট পড়ার ভীতর থেকে এন্ড্রুয়েড মোবাইল সেটটি উদ্ধার করে। যদিও অনুসন্ধান সরেজমিনে এসব কথা আঃ রব স্বীকার করেন।
কিন্তু গোপন তথ্যে জানা যায়, আঃ রব মিমকে শ্লীলতাহানি করেন এবং চোর চোর বলে অপমান অপদস্ত সহ হেয়প্রতিপন্ন করেন। পরে যদিও মিমের পরিবারকে খবর দিয়ে তাদের হাতে মিমকে তুলে দেন আঃ রব ও আশপাশের দোকানদার লোকজনরা। যদিও এমন ঘটনার কথা আঃ রব স্বীকার যাননি।
গুঞ্জন উঠেছে মিমকে আঃ রব শ্লীলতাহানি সহ চোর চোর বলে অপমান অপদস্ত ও হেয়প্রতিপন্ন করার কারণে হয়তো লজ্জায় ঘৃনায় আত্মাহত্যার পথ বেচে নিয়েছে।
এদিকে অনুসন্ধানে আরও একটা তথ্য পাওয়া যায় এবং মিমের সহপাঠিরা নাম না বলা শর্তে জানান, এক ছেলের সাথে মিমের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। ছেলে ঢাকাতে পড়াশোনা করে। এর আগেও মিমের একাধিক ছেলেদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পূর্বের সম্পর্কের কথা মিমের এক ঘনিষ্ট বান্ধবী ওই ছেলেকে বলে দেয়। এতে ওই ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে মিমের সাথে সকল সম্পর্ক বন্ধ করে দেয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও ব্লক করে রাখে। এতে মিম অস্বাভাবিকভাবে ভেঙে পড়ে। এতে অভিমান করেও আত্মাহত্যা করতে পারে মিম।
এব্যাপারে নুসরাত জাহান মিমের বাবা মোঃ মালেক মৃধা অনুসন্ধান সরেজমিনে প্রতিবেদককে বলেন, আমার খুব আদরের মেয়ে, বড় মেয়ে ছিল। মেয়ে মোবাইল ফোন চালাইতো আমরা কেউ জানতাম না। মেয়ের মৃত্যুর পর রান্নাঘরের চালে লুকানো অবস্থায় খুঁজে পাই ব্যবহার করার মোবাইল সেটটি। আমার কাছে এক এক করে সব ডকুমেন্ট আসতাছে। মোবাইলের ভীতরেও পাওয়া গেছে অনেক কিছু। কে অপমান অপদস্ত করেছে, কার সাথে সম্পর্ক ছিল, কে কোথায় এখন! আমি সব এক এক করে বলব এবং আইনি ব্যবস্থা নিব বলে আর কিছু বলেননি তিনি।
এদিকে পরিবার থেকে আরও একটা তথ্য পাওয়া যায় যে, চোর চোর বলে শ্লীতাহানি, অপমান, অপদস্ত করার পর সেই খবর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করা ছেলের কাছে বলে দেওয়া হয়। ওই ছেলে মেয়ের ফেসবুক আইডি ও মেসেঞ্জার ব্লক করে দেয়। এতে মেয়ে ক্ষোভে, লজ্জায়, ঘৃণা, অভিমানে আত্মাহত্যার পথ বেচে নিতে পারে। এবং মেয়ে একজনকে ঘুমের ঔষধ আনার জন্য বলে কিন্তু সে ঘুমের ঔষধ না এনে পোকা মাকড়ের হাত থেকে চাল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিষাক্ত ট্যাবলেট এনে দেয়, তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। কিন্তু ঔষধ এনে দেওয়া সেই ছেলেটা এখন পলাতক রয়েছে। তার খোঁজখবর চলছে, তাকে পেলেই জিজ্ঞাসা করা হবে। এবং অনেক আলামত রয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকালের দিকে উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দাসপাড়া খেজুরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আঃ মালেকের মেয়ে ও কালাইয়া রাব্বানিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান মিম পোকা মাকড়ের হাত থেকে চাল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিষাক্ত ট্যাবলেট খায় এবং মিম গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিমকে মৃত ঘোষনা করেন। পরে মৃত্যুর রহস্য জেনে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেম করেন। এবং থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়।
এবিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল বাশার বলেন, এব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে।
Copyright © 2025 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics