Daily Frontier News
Daily Frontier News

প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও ছাত্রলীগের নেতাদের রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করছে না পুলিশ

 

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা মামলা, সাংবাদিক গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার :

 

চুনারুঘাটের সাংবাদিক আবদুল জাহির মিয়ার ওপর হামলার ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মিয়াসহ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আহত সাংবাদিক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাদীসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পাল্টা চাঁদাবাজির মামলা করেন ছাত্রলীগের এক কর্মী।

গত বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহার দিন রাতে চুনারুঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী মহিবুর রহমান চুনারুঘাট থানায় গিয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ওই রাতেই আবদুল জাহিরের বন্ধু ও স্থানীয় সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাককে (৪০) বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাঁকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় থানার সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হয়। কিন্তু সাংবাদিকের মামলায় কোনো আসামিকে রহস্যজনক কারণে আটক বা গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তারা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। এতে করে চুনারুঘাট থানা পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মামলার অভিযোগ ও সাংবাদিক আবদুল জাহিরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি সাতছড়ি বনের গাছ পাচার নিয়ে দৈনিক সিলেট পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মিয়া তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন। ২৩ জুন দুপুরে চুনারুঘাট উপজেলার চণ্ডীছড়া মাজারের সামনে সায়েমের নেতৃত্বে তাঁর ওপর হামলা হয়। আহত অবস্থায় ওই দিন রাতে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ফের তাঁর ওপর হামলা করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিক আবদুল জাহির ২৫ জুন হবিগঞ্জ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন করেন। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার জন্য চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ২৭ জুন মামলাটি থানায় রেকর্ড হয়।

ওই মামলার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই ঈদের দিন রাতে মামলার বাদী সাংবাদিক আবদুল জাহির মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন ছাত্রলীগ কর্মী মহিবুর রহমান। এই মামলায় আরও আসামি করা হয় একই উপজেলার বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাককে। তিনি দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকার চুনারুঘাট উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি। আবদুর রাজ্জাককে ঈদের দিন দিবাগত ভোর রাতে চুনারুঘাট থানা-পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। সাংবাদিক রাজুকে ঈদের দিন রাতে গ্রেফতার করে নিয়ে এলেও সাংবাদিক জাহিরের দায়েরকৃত মামলার আসামি ছাত্রলীগের নেতাকে আটক বা গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এর পেছনে ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক আব্দুল জাহির।

তিনি বলেন, গাছ পাচার নিয়ে প্রতিবেদন করায় ছাত্রলীগ নেতা সায়েম ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ওপর পরপর দুবার হামলা করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরে তিনি হবিগঞ্জ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এ মামলার পর পরই ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতারা তাঁর ওপর মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছেন। এ মামলায় আরও আসামি করা হয় তাঁর বন্ধু সাংবাদিক আবদুল রাজ্জাককে। মামলার বাদী মহিবুর রহমান ছাত্রলীগের একজন কর্মী। মামলা করার কিছুক্ষণ পরেই আবদুল রাজ্জাককে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আবদুর রাজ্জাককে পুলিশ চুনারুঘাট থানার সামনে দাঁড় করিয়ে হাতকড়া পড়িয়ে ছবি তোলায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। দৈনিক জনকণ্ঠের হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মামুন চৌধুরী ও বাংলানিউজ ২৪ ডটকমের জেলা প্রতিনিধি বদরুল আলম বলেন, সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাককে থানার সামনে হাতকড়া পড়িয়ে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলার অধিকার পুলিশ রাখে না। কারণ, গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক এখনো আদালতে অভিযুক্ত হননি।

মামলার বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী ও মামলার বাদী মহিবুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, একটু ব্যস্ত আছেন। পরে কথা বলবেন। এরপর তিনি এ নিয়ে আর কথা বলেননি।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা আজ শনিবার দুপুরে বলেন, গ্রেপ্তার আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনের ৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬/৩৪ ধারায় মামলা হয়েছে। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে ছবি তোলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করলেও হাতকড়া পরিহিত সাংবাদিক রাজুসহ পুলিশের ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের এই একমুখী আচরণে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক সাংবাদিক।

Daily Frontier News