জামাল উদ্দিন স্বপন কুমিল্লা
ছেলে সামছুল হক প্রবাসী ও ব্যবসায়ী। স্ত্রী শাহিদা আক্তারকে নিয়ে নিজ নামে ‘হক মঞ্জিল’। পাঁচতলা ভবনে তিনতলায় বসবাস তাদের। অথচ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে ফেলে রেখেছেন ভবনের ছাদে মুরগী খামারে সঙ্গে ছোট্ট টিনের ঘরে। সেখানে আছে ভাঙা একটি টিনের ঘর, নিচে চটের বিছানায় আর কিছু পানির বোতল। ময়লা, দুর্গন্ধ, মশার কামড় জুটে এই বৃদ্ধার কপালে। খাবারও খেতে হয় মুরগীর খামারে!
এমনই এক মানবতার জীবন নিয়ে, ছেঁড়া কাপড় জড়িয়ে কোনো রকম বেঁচে আছেন কুমিল্লা লাকসাম পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে কলেজে রোড ও পশ্চিমগাও পুরান বাজার এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব আলী (৮০)।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বুকভরা কষ্টগুলো চিৎকার করে বলতে চাইলেও বয়সের ভারে বন্ধ হয়ে গেছে তার আওয়াজ। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছেন তিনি।
এমন কষ্টের দৃশ্য সন্তানদের চোখে না পড়লেও এলাকার মানুষ ঠিকই উপলব্ধি করতে পারেন।
একসময় যে পিতা তাঁর ছেলেকে কোলে-পিঠে নিয়ে বড় করেছিলেন, আজ তিনি নিজেই উপেক্ষিত। সেই সন্তান বড় হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে পাকা দালান ঘরে সাজানো বিছানায় ঘুমালেও বৃদ্ধ পিতাকে থাকতে হয় ভবনের ছাদে। একটি মাত্র টিনের ঘরে মুরগী খামারে সঙ্গে। যেখানে নেই কোনো মশারি বা বিছানা।
রোববার ২০ নভেম্বর বিকালে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
ওইদিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা মতিন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলা কান্দিরপাড় ইউনিয়ন ছঁনগাও গ্রামের নিজ বাড়ীতে স্ত্রী ও ২ ছেলে- ৫ মেয়ে নিয়ে থাকতেন বৃদ্ধ ইয়াকুব আলী (৮০)। ২০০৬ সালে তার স্ত্রী মৃত্যুর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন ইয়াকুব আলী।
বড় ছেলে প্রবাসী সামছুল হক ২০০৭ সালে লাকসাম পৌরসভার পশ্চিমগাঁও পুরান বাজার এলাকায় ৭ শতক সম্পত্তির মধ্যে ‘হক মঞ্জিল’ নামে একটি বহুতল ভবন নির্মিত করা হয়েছে।
ছেলে সামছুল হক ভবনের তিনতলায় স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে থাকেন। পাঁচ তলা ভবনের ছাদের ওপর একটি টিনের ঘরে রাখছেন তার বৃদ্ধ বাবাকে। ঘরের একপাশে মুরগী খামার অপর পাশে বস্ত্রহীন অবস্থায় পড়ে আছেন বৃদ্ধ ইয়াকুব আলী। চটের বিছানার আশপাশ দুর্গন্ধ ও ব্রয়লার মুরগীর ময়লা।
প্রতিনিধিকে দেখে ছুটে এলেন বৃদ্ধের ছেলে বৌ শাহিদা আক্তার । তিনি বলেন, শ্বশুর দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। শ্বশুরের মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিক ওষুধ ও দেখভাল করেন তিনি। কত দিন ধরে ছাদে রাখা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১-২ মাস ধরে বাবাকে রাখা হয়েছে। এর আগে আমাদের রুমে থাকতেন তিনি। তা ছাড়া তাঁকে ঘরের মধ্যে রাখা যায় না, মাথায় সমস্যার কারণে সব কিছু ওলট-পালট করেন।
মোবাইলে কথা হয় বৃদ্ধ বাবার বড় ছেলে সামছুল হকের সঙ্গে, তিনি অনুনয়-বিনয় করে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান। আমার বাবা মাথায় সমস্যা; ঠিকমতো কাপড় পরেন না। কোনোভাবেই ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না!
’পিতাকে এমন অবহেলা-অযত্নে ঘরের বাইরে ফেলে রাখার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে এখন থেকে পিতার প্রতি যত্নবান হবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
লাকসাম পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আবু সায়েদ বাচ্চু যুগান্তরকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে ওই বৃদ্ধাকে প্রায়ই এলাকায় দেখতাম। গত কয়েক মাস ধরে দেখি না। তার ছেলে সন্তানরা থাকার পরও নিজ বাড়ির ছাদে বসবাস খুবই দুঃখজনক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা মতিন বলেন, বৃদ্ধ বাবাকে এখান থেকে তাদের বাসায় নিয়ে আসার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। যদি তারা দায়িত্ব পালন না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Copyright © 2025 Daily Frontier News | Design & Developed By: ZamZam Graphics